তাহিরপুরে করানো ও পানি বৃদ্ধির মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার
আবির হাসান মানিক :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্ত নদী যাদুকাটা। বর্ষায় ফুলে-ফেঁপে ওঠে নদীর বুক। কানায় কানায় পূর্ণ হয় নদীর দুই কূল। এ অঞ্চলের সাধারণ লোকজন থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীরা বর্ষাকালে ঝুঁকি নিয়েই যাদুকাটা নদী পারাপার হন। আর হেমন্তে পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেলযোগে নদীর বুক পাড়ি দিচ্ছেন এখনও। তবে আশার কথা, যাদুকাটা নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে অচিরেই হয়তো এ দুর্ভোগের লাঘব হবে।
গত কয়েকদিনের পাহাড়ি ঢলে যাদুকাটা নদীতে পানি বেড়েছে অনেকাংশে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈশ্বিক জনজীবনে মহামারী আকার ধারণ করা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ঈদের আমাজে লোকজন ঝুঁকি নিয়েই খেয়ায় করে যাদুকাটা নদী পারাপার হচ্ছেন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধিও উপেক্ষিত। খেয়ায় ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সী লোকজনকে পার হতে দেখা গেছে। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকা এসব লোকজনের ভিড়েই আবার ৮-১০টি মোটরসাইকেলও নিয়ম করে পার হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো দূর থেকে খেয়ায় করে লোকজনের এমন পারাপারের দৃশ্য দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবে। কিন্তু এ অঞ্চলের লোকজন অনেকটা নির্ভার হয়েই খেয়া পারাপার হচ্ছেন। কখনও কখনও নৌকাডুবির ঘটনায় অনেকে নানাভাবে দুর্ঘটনায় পতিত হন, আবার কখনও বা নৌকা ডুবে নদীর বুকে অনেক মোটরসাইকেল হারিয়ে গিয়েছে। নৌকা পারাপারে বিলম্ব হওয়ায় অনেকের গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটেছে। গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ও পরীক্ষায় সময় মতো উপস্থিত হতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আর নদী পারাপারের সময় যদি ইঞ্জিনের ত্রুটি দেখা দেয় কোনো কারণে, তাহলে ঘন্টা দেড়েক সময় মাঝ নদীতেই দিন পার করে দিতে হয়।
জানা যায়, ২০-২৫টি গ্রামের কয়েক হাজার লোক বর্ষাকালে খেয়া দিয়েই যাদুকাটা নদী পারাপার হতে হয়। নদীর পশ্চিমে বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজার, বাদাঘাট সরকারি কলেজ, তাহিরপুর উপজেলা সদর, শিমুল বাগান, বারেকটিলা, শহীদ সিরাজ লেক, ৩টি শুল্ক স্টেশনে এবং নদীর অপর পাড়ে অদ্বৈত মহাপ্রভুর আশ্রম ও জেলা সদরে যাতায়াত করতে খেয়া নৌকায় করেই যাদুকাটা নদী পার হতে হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাদেশের ন্যায় তাহিরপুরেও পর্যটকদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় হাজারও পর্যটক, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকসহ সাধারণ লোকজন নৌকা করেই যাদুকাটা নদী পার হতে হয়। যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম না থাকায় ঝুঁকি মেনে নিয়ে এ যাবতকাল ধরে লোকজন নৌকা করেই যাদুকাটা পাড়ি দিচ্ছেন।
বাদাঘাট সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী তাহসিন হাবিব জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ। কিন্তু কলেজ খোলা থাকাকালীন সময়ে বর্ষাকালে ঝুঁকি নিয়েই যাদুকাটা নদী পাড়ি দিয়ে ক্লাস করতে হয়। অনেক সময় পরিবার থেকে নিষেধ করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে না যেতে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ও পরীক্ষাকালীন সময়ে না এসে তো উপায় থাকে না।
লাউড়েরগড় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. চান মিয়া বলেন, কয়েক যুগ ধরে এ অঞ্চলের সর্বসাধারণের যাদুকাটা নদী পারাপারের জন্য খেয়া নৌকাই একমাত্র অবলম্বন। পানি বৃদ্ধির সময় ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হতে হচ্ছে।
বিন্নাকুলি গ্রামের লুৎফুল করিম লালঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি জানান, যাদুকাটা নদী পার হয়ে স্কুলে পৌঁছাতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়, ঝুঁকিও প্রবল। নৌকা পারাপারের কারণে অনেক মূল্যবান সময়ের অপচয় হয়।
নদীর পূর্ব পাড়ে বসবাসকারী তাহিরপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিন রিপন বলেন, ঝুঁকি নিয়েই এ অঞ্চলের লোকজনকে যাদুকাটা নদী পার হতে হয়। দু’টি নৌকা হলে এক্ষেত্রে ঝুঁকি কম হতো। তবে অচিরেই এ ব্যবস্থার নিরসন হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ও সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যাদুকাটা নদীতে নির্মাণাধীন সেতু আজ দৃশ্যমান। ১-২ বছরের মধ্যেই এ অঞ্চলের লোকজন মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে যাদুকাটা সেতু দিয়ে জেলা সদরসহ উপজেলার অন্যান্য স্থানে যোগাযোগ করতে পারবেন।