তাহিরপুরে পাহাড়ে ঢলে আমনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর :
হাওর বেষ্টিত তাহিরপুরে গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে আমনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাশাপাশি বিনষ্ট হয়েছে অনেক রবিশস্য। কয়েক দফা বন্যা, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এ বছর এমনিতে বিলম্বিত হয়েছে আমন চাষ। এখন আবার গত কয়েক দিনের লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতে নিমজ্জিত কৃষকের আমন ক্ষেত।
খরা ও বৃষ্টি সব মিলিয়ে তাহিরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অধিকাংশ কৃষকের আমন ক্ষেত। পাশাপাশি বিনষ্ট হয়েছে রবিশস্য।
আর কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, বিলম্বিত রোপণ, কয়েকদিনের খরা, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এ বছর কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবেনা।
কয়েক দফা বন্যায় এমনিতেই আমনের বীজ রোপণে বিলম্ব হয়েছে এরপর আবার কয়েক দিনের খরা, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে অধিকাংশ কৃষকের আমন ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত আবার খরায় চারা নেতিয়ে পড়া সব মিলিয়ে এ বছর কাঙ্ক্ষিত ফলন হবেনা।
এ বছর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজ ও ১হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষাবাদ করা হয়। গত কয়েক দিনের খরা, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে এসব কৃষকের রোপা আমান ও রবিশস্য নষ্ট হয়ে গেছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ৩’শ একর রোপা আমন জমি পানির নীচে তলিয়েছে।
তাহিরপুর সদর, বাদাঘাট, শ্রীপুর উত্তর, বালিজুরি ও বড়দল উত্তর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দফায় বন্যা এখন আবার ভারী বৃষ্টিপাত, পানি বৃদ্ধি, খরা যেন ভোগান্তি আর দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না।
এদিকে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সীমান্ত নদী জাদুকাটা উপচে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর সেতুর এপ্রোচের ১০০ মিটার রাস্তা ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আনোয়ারপুর সেতু সংলগ্ন আনোয়ারপুর বাজারের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মিলন তালুকদার বলেন, গত তিনদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ঢলের পানির থোরে আনোয়ারপুর সড়কের এপ্রোচের ১০০ মিটার সড়কটি তলিয়ে যায়।
ইউপি সদস্য শের আলী বলেন, ইউনিয়নের সোহালা ইসবপুর, নূরপুর, লামাপাড়া, নাগরপুর, সোনাপুর, ননাই, ভূলাখালি গ্রামের প্রায় ৭’শ একর জমি রোপা আমন ধান দ্বিতীয় দফা পাহাড়ি ঢলে বিনষ্ট হয়ে গেছে। তিনি তাদের ক্ষতিপূরনের বিষয়টি নজরে আনার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবি জানান। তিনি আরো জানান, তাদের রোপা আমন জমি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি তাদের বসত বাড়িতেও ঢলের পানি উঠেছে।
উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম বলেন, তার ইউনিয়নের প্রায় ৮’শ একর রোপা আমন জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
বালিজুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণকূল গ্রামের সমাজসেবক জিয়া উদ্দিন বলেন, বালিজুড়ি ইউনিয়নে প্রায় ১’হাজার একর রোপা আমন জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা বলেন, সম্প্রতি পাড়ি ঢলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৩’শ একর জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান জানান, পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়াবে।