তাহিরপুর গণগ্রন্থাগার, বই নেই শুধু সভা-সেমিনার!
আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর :
হাওর পরিবেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর অঞ্চলটি অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পিছিয়ে পড়া এক জনপদ। পিছিয়ে পড়া এ জনপদে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র তৈরি করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল উপজেলা গণগ্রন্থাগার। যে উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল পাবলিক লাইব্রেরিটির, তা আজ গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। লাইব্রেরিটি সাহিত্যপ্রেমী, শিক্ষার্থীদের পদচারণার পরিবর্তে সভা-সেমিনার আবার কখনও অফিসার্স ক্লাব, কখনও বা পাবলিক মিলনায়তন হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে!
বর্তমানে একতলা বিশিষ্ট এই অবকাঠামোটি প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে। শুরুর দিকে যা কিছু বইপত্র ছিল, যে যার মতো করে নিয়ে গেছে, এখন বইয়ের পরিবর্তে রয়েছে টেবিল টেনিস সহ সৌখিন খেলাধুলার সরঞ্জাম!
সূত্রে জানা যায়, জ্ঞানচর্চার লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে তা আর চালু করা যায়নি। ১৯৯৩ সালে এটি চালু করার লক্ষ্যে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি, ১জন সদস্য সচিব ও ৫জনকে সদস্য করে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু অর্থ সংকট দেখিয়েই সেই উদ্যোগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১দিনের জন্যও চালু হয়নি গ্রন্থাগারটি! বর্তমানে গ্রন্থাগারের এই ভবনটি সরকারি বিভিন্ন সভা-সেমিনারসহ প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন মিটিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য গোলাম সরোয়ার লিটন বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো এই লাইব্রেরিটি আমরা চালু রাখতে পারিনি। উপজেলা সদরসহ আশেপাশে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে আর কোন গণপাঠাগার নেই। তাই হাওরবেষ্টিত এ উপজেলায় গণগ্রন্থাগারটি চালু করা অতীব জরুরী।’
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে পাঠাগারের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সেই পাঠাগার যদি বন্ধ থাকে তবে এই পাঠাগারের কোন মূল্য নেই। পাঠাগার পাঠকের পদচারণায় মুখরিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাহিরপুর গণগ্রন্থাগারটিও তাহিরপুরবাসীর মনে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই এটি অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। আমি বর্তমান প্রশাসনের কাছে এই পাঠাগারটিকে সক্রিয় করে জ্ঞান চর্চার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দাবি জানাই।
তিনি বলেন- ‘এই পাঠাগার শুধু বই পড়া নয় তাহিরপুরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে যুব সমাজ মাদক সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে সৃজনশীলতার চর্চা করার সুযোগ পেত। আশাকরি সচেতন তাহিরপুরবাসীও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন ও পাঠাগারটি চালু করার দাবি জানাবেন।’
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. জসীম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, উপজেলা গণগ্রন্থাগারের বর্তমান অচলাবস্থা নিয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।