দক্ষিণ সুনামগঞ্জের কামারশিল্পে দুর্দিন
নোহান আরেফিন নেওয়াজ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ :
প্রতিবছরই কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে ‘হাওরের উঠানখ্যাত’ দক্ষিণ সুনামগঞ্জের কামারদের কর্মব্যবস্থা বাড়ে বহুগুন। পশু কোরবানির প্রয়োজনীয় যন্ত্র দা, ছুরি, বটিসহ বিভিন্ন যন্ত্রের চাহিদাও বাড়ে মানুষদের। মানুষদের চাহিদা মেটাতে এসময়ে হিমশিম খেতে হতো কামারদের। কিন্তু এবার কামারপল্লী ও দোকানগুলোর চিত্র ঠিক তার উল্টো। প্রথমে মহামারী করোনা এরপর তিন দফা বন্যায় ঘরবন্দি মানুষ। ব্যবসা-বানিজ্যে সুবিধা করতে না পারায় জমে উঠছে না এবার কোরবানির হাটও।
করোনার লকডাউন কাটিয়ে ধারদেনায় দোকানে দা, ছুরি, চাপাতির পসরা সাজিয়ে বসে থাকলে ও এবছর কামারশিল্পের জিনিসের চাহিদা কমেছে প্রচুর। ফলে মারাত্নক বিপর্যয়ে পড়েছেন এই উপজেলার কামারশিল্পীরা। এ যেন কামারদের মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও কামারপল্লী ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে ঘিরে কামররা দা, ছুরি, চাপাতিসহ অন্যান্য দেশীয় লোহার জিনিসপত্র তৈরী করছে ঢিলেঢালাভাবে। যেসময়টা টুং টাং শব্দে কামারপট্টিগুলোতে কর্মব্যবস্থতা থাকার কথা সেখানে এখন শুনশান নিরবতা। এতে কাঙ্খিত ক্রেতা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন কামারশিল্পীরা।
পাগলাবাজারের ভানু দে বলেন, একদিকে করোনা আরেকদিকে তিনদফা বন্যায় আমরা দিশেহাড়া হয়ে পড়েছি। এক মৌসুমে আমরা যা উপার্জন করি তা দিয়ে সারাবছর চলতে হয়। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদে নিজের পরিবারের খরচ টুকুও করতে পারবো না।
বীরগাঁও রোড সংলগ্ন সুরঞ্জিত দে নামের আরেক দোকানদার বলেন, টানা তিন বারের বন্যার কারণে এবার গত ঈদের চেয়ে কাজ কম। তবে বাজারে আমদানিকৃত হাতিয়ার আসায় আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা বহুগুণে কমে গেছে। ফলে পূর্বপুরুষের এই পেশা ধরে রাখা দুষ্কর হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
রতন দে নামের আরেকজন বলেন, করোনার পর চোখে স্বপ্ন নিয়ে ধারদেনা করে দোকানে দুইলক্ষ টাকার মালামাল উঠিয়েছি। কোরবানির ঈদে এসব পণ্যের চাহিদা থাকে প্রচুর। কিন্তু এবছর করোনা সংকট আর তিন দফা বন্যায় উপজেলার উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ও বিপাকে রয়েছেন। ফলে এবছর কোরবানীর হার অনেক কম। আমাদের বিক্রিতে এর মারাত্নক প্রভাব পড়েছে। এমতাবস্থায় দেনা পরিশোধ ও পরিবারের খরচ জোগান দিতে প্রতিদিনই যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমাদের।
বিপাকে পড়া কামারশিল্পীরা সরকারী আর্থিক সহায়তা পেতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের নিকট দাবী জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মী বলেন’ উপজেলা প্রশাসনে তাদের জন্য কোনো পৃথক কোনো সরকারী বরাদ্দ পাই নি । করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপাকে পড়া কামারশিল্পীদের প্রণোদনার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানাবো। প্রণোদনা পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদেরকে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।