রাত ১১:১৭,   মঙ্গলবার,   ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,   ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

সংস্কারের অভাবে বেহাল বারেক টিলার আঁকাবাঁকা সড়ক


আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর :
পাহাড়, নদী আর প্রকৃতির বিরল সৌন্দর্যের মেলবন্ধন বারেক টিলা। সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি দেখে চোখ জুড়ানোর পরিবর্তে শঙ্কা আর দুর্ভোগের অপর নাম হয়ে উঠেছে তাহিরপুরের বারেক টিলার আঁকাবাঁকা সড়কটি।
বারেক টিলা, স্থানীয়দের কাছে বারিক্কা টিলা হিসেবেই পরিচিত। ভ্রমণ পিয়াসু পর্যটকরা টিলার উঁচুনিচু, আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে হাওর, আর পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া যাদুকাটার স্বচ্ছ স্রোত ধারা দেখে নয়ন জুড়ানোর পরিবর্তে গত বছর দুয়েক যাবত টিলার এ আঁকাবাঁকা সড়কটি পর্যটকদের নিকট উপভোগ্যের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ আর শঙ্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সড়কটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খানাখন্দ, বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যে-কোনও মুহুর্তে ঘটাতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ এ সড়কটি নিয়ে এর আগে গত ২০১৯ এর ২৮ ডিসেম্বর তারিখে সিলেট ভয়েসে ‘বারেকটিলার সৌন্দর্যের আকাবাঁকা রাস্তায় ভাঙন, দুর্ভোগ’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
এদিকে করোনা কালীন সময়ে সারাদেশের ন্যায় তাহিরপুরেও পর্যটকদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সম্প্রতি এ নিষেধাজ্ঞায় কিছু শিথিল করার ফলে পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
ভ্রমণ পিয়াসুরা তাহিরপুরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি টিলার আঁকাবাঁকা সড়কটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর সড়কটির এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেখে রীতিমতো অভিযোগ তুলেছেন দায়িত্বশীলদের প্রতি।

আর দায়িত্বশীলরা বলছেন, খুব শিগগির সংস্কার করা হবে এ সড়ক। এতে লাগব হবে ভ্রমণ পিয়াসুদের দুর্ভোগ আর শঙ্কার পরিবর্তে মিলবে স্বস্তি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বারেক টিলায় উঠার জন্য প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের উঁচুনিচু, আঁকাবাঁকা একটি সড়ক রয়েছে। আর এই সড়ক বেয়েই পর্যটকরা উপরে উঠে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তবে উপড়ে উঠতে গিয়েই বিড়ম্বনায় পড়ছেন পর্যটকরা। কারণ এই এক কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগ জায়গায়ই রয়েছে বড়বড় গর্ত আর খানাখন্দ ভরপুর। নিচ থেকে উপড়ে উঠতে গেলে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্তের দেখা মিলে।
এছাড়াও সড়কের মাঝে এবং একেবারে উপড়ের দিকে রয়েছে আরও একাধিক গর্ত। আঁকাবাঁকা এ সড়কের অনেক জায়গায় পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ছে বিড়ম্বনা সেই সাথে শঙ্কা। আর এসব গর্তে বিভিন্ন যানবাহন পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কটি আঁকাবাঁকা হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। কারণ একবার যানবাহন স্লিপ করে যদি পড়ে যায় তাহলে নিচ দিয়ে বয়ে চলা যাদুকাটা নদীতে পড়ে যাবার আশঙ্কাও প্রবল। এজন্য বড় ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত সংস্কারের দাবিও জানিয়েছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা।
কুষ্টিয়া থেকে ঘুরতে আসা ইমরান আহমেদ বলেন, দূর থেকে যতটা শুনেছি বা বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি তার থেকেও বেশি ভালোলাগা বোধ কাজ করছে সৌন্দর্যের এতো কাছে আসতে পারে। বারেক টিলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আঁকাবাঁকা পথ অসাধারণ। তবে আঁকাবাঁকা রাস্তার বেশ কিছু স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা দেখার পর মোটরসাইকেল বেয়ে উপরে উঠার সাহস হচ্ছে না। মোটরসাইকেল খোয়া যেতে পারে এ শঙ্কা মনে নিয়েই মোটরসাইকেল নিচে রেখে পায়ে হেঁটে উপরে উঠেছি। অনেককে আবার মোটরসাইকেল বেয়েই উপরে উঠতে দেখেছি কিন্তু ভয় আর আশংকায় আমি মোটরসাইকেল টিলার নিচেই রেখে এসেছি।
বারেক টিলা, যাদুকাট, বড়ছড়া, শিমুল বাগান রোডে চলাচল করা স্থানীয় পেশাদার মোটরসাইকেল কয়েকজন চালক বলেন, ঘুরতে আসা পর্যটকরা মোটরসাইকেল নিয়ে টিলার এ রাস্তা বেয়ে সহজে উপরে উঠার সাহস করেনা । আর যারাই মোটরসাইকেল বেয়ে উপরেই উঠে তারা খুব সতর্কতার সাথে উপরে উঠতে হয়। কারণ সড়কটির বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাটি বর্তমানে অনেকাংশেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আমরা ভয় নিয়েই এ রাস্তা বেয়ে উপরে উঠা-নামা করি।
আর স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার হাসান রুবেল বলেন, বারেক টিলায় মোটরসাইকেলে রাস্তা বেয়ে উপরে উঠা-নামা করার সময় অনেকসময় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বিভিন্ন সময় কয়েকজন আহত হয়েছেন। এজন্য আমরা খুব সাবধানে এ রাস্তা বেয়ে উপরে উঠা-নামা করি। কারণ রাস্তাটি যতটা আকর্ষণীয় ঠিক ততটাই ঝুঁকিপূর্ণও, যেকোনো সময় অসাবধানতার কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে আসেন তাদের জন্য রাস্তাটা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ নতুন অবস্থায় রাস্তা বেয়ে উপরে উঠার সময় আঁকাবাঁকা রাস্তার গতিপ্রকৃতি তেমন ভাবে অনুধাবন করা যায় না। এজন্য পর্যটকদের চলাচল নিরাপদ তথা সার্বিক দিক বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের কাছে আহবান করছি যেন রাস্তাটির দ্রুত সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
তাহিরপুরের বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাসেম বলেন, বারেক টিলার আঁকাবাঁকা রাস্তাটি এখন অনেকাংশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য মারাত্মক বিপদজনক হয়ে উঠছে রাস্তাটি। বারেক টিলায় প্রশাসনের বা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘুরতে আসেন, আমি তাদেরকেও রাস্তাটির সংস্কারের জন্য বলেছি, তাছাড়া উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি বারবার উপস্থাপন করা হয়েছে, জেলার সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছে তাদেরকেও সড়কটির বেহাল দশার কথা জানিয়েছি কিন্তু সবাই কেবল আশ্বস্তই করেছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তবে তাহিরপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কাজী ফজলুল হক জানান, সড়কটি আমরা দেখেছি, পর্যটকদের জন্য এটা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিওবি’এর স্কিম গ্রহণ করে প্রাক্কালন প্রেরণ করা হয়েছিল কিন্তু অনুমোদন পায়নি। তবে জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
আর তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, বারেক টিলার আঁকাবাঁকা সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর তাহিরপুরে এক জনসভায় বারেক টিলা ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার ঘোষণা দেন।