সন্ধ্যা ৭:১৫,   বৃহস্পতিবার,   ৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সুনামগেঞ্জ নিজ বাড়িতে সাজা খেটে উপহার পেলেন গাছের চারা

নিউজ ডেস্ক :
মাদকের এক মামলায় রায়ে এক বছরের সাজা হয়েছিল সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা মো. নুর উদ্দিন ওরফে সেলিমের (৩৮)। তবে আদালত তাঁকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য ব্যতিক্রমী আদেশ দেন। তাতে একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে নিজ বাড়িতে থেকে ওই সাজা ভোগের আদেশ দেন। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আদালতের আদেশে মুক্ত হয়েছেন নুর উদ্দিন। একই সঙ্গে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে তিনটি গাছের চারা উপহার দেওয়া হয়েছে আদালত ও প্রবেশন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে।
সুনামগঞ্জে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভদীপ পাল গতকাল বৃহস্পতিবার এই আদেশ দিয়েছেন। চূড়ান্তভাবে মুক্ত হয়ে খুশি বিদ্যুৎশ্রমিক নুর উদ্দিন। তাঁকে ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স ১৯৬০’ মোতাবেক সাজা দেওয়া হয়েছিল। আদালতের বিচারকের আদেশে জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে থেকে সাজাভোগ করেন নুর উদ্দিন।
সুনামগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির এনামুল হক বলেন, নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা ছিল। এই মামলায় গত বছরের ১০ এপ্রিল তাঁকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভদীপ পাল। কিন্তু তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়নি। বিচারক তাঁকে সংশোধনের জন্য জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমানের তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে থেকে সাজাভোগের আদেশ দেন। পুরো এক বছরই নির্ধারিত সব শর্ত মেনে চলেন ওই ব্যক্তি। তাঁর সাজার মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ১০ এপ্রিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে প্রবেশন কর্মকর্তা ভার্চ্যুয়াল আদালতে ওই আসামিকে চূড়ান্তভাবে মুক্তি দিতে আবেদন করেন। এই আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল নুর উদ্দিনকে চূড়ান্তভাবে মুক্তি দেন বিচারক। একই সঙ্গে প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনটি ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণের জন্য উপহার দেওয়া হয়।
‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স ১৯৬০’ মোতাবেক সুনামগঞ্জে বিচারিক আদালতের এটিই প্রথম কোনো মামলার সফল প্রয়োগ বলে উল্লেখ করেন আদালতের নাজির এনামুল হক। এই আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী, আগে দণ্ডিত হননি এমন কোনো অপরাধী অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে আদালত অপরাধীর বয়স, স্বভাব-চরিত্র, প্রাক্‌-পরিচয় অথবা শারীরিক বা মানসিক অবস্থা এবং অপরাধের ধরন অথবা অপরাধ সংঘটনে শাস্তি লাঘবকারী পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক যদি মনে করেন যে দণ্ড প্রদান অসমীচীন এবং প্রবেশনের আদেশ প্রদান করা যথাযথ নয়, তাহলে আদালত কারণ লিপিবদ্ধ করে সতর্ক করত অপরাধীকে অব্যাহতি দিতে পারেন অথবা উপযুক্ত মনে করলে আদেশে বিবৃত সময় হতে অনধিক এক বছর সময়ের জন্য কোনো অপরাধ না করার এবং সদাচরণে থাকার শর্তে জামিনদারসহ বা জামিনদার ছাড়া মুচলেকা প্রদানে বিমুক্ত হওয়ার আদেশ দিতে পারেন।
মুক্ত হতে পারায় খুশি মো. নুর উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। বিদ্যুতের কাজকাম করে ছয়জনের সংসার চালাই। আমি জেলে গেলে পরিবারের অন্যদের না খেয়ে থাকতে হতো। আদালতের দয়ায় জেল থেকে রক্ষা পেয়েছি। আদালতের প্রতিটি আদেশ এই এক বছর পালন করেছি। আমি আর কখনো কোনো অপরাধ করব না।’
জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান বলেন, নিজ বাড়িতে সাজা খাটার বিষয়ে শর্ত ছিল নুর উদ্দিনের এই সময়ের মধ্যে জেলার বাইরে যেতে পারবেন না। পরিবার, প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবেন। আর কোনো অপরাধে জড়াবেন না। নিয়মিত প্রবেশন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। তিনি সব শর্ত মেনেছেন। তাঁর পরিবার, প্রতিবেশী সবাই বলেছেন, তিনি সংশোধন হয়েছেন। তাই আদালত তাঁকে চূড়ান্তভাবে মুক্ত করে দিয়েছেন।
(সূত্র : প্রথম আলো)