সকাল ১০:০৮,   শুক্রবার,   ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১২ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২৩শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কমছে ঢাকার বায়ুদূষণ

নিউজসুনামগঞ্জ ডেস্ক:
লকডাউনে কমেছে রাজধানীর বায়ু দূষণ। অন্যান্য সময়ের মতো মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায় রাস্তাগুলো বলতে গেলে ফাঁকা। চলছে না গণপরিবহণ। জরুরি সেবা ছাড়া কোনও ইঞ্জিন চলছে না। ফলে হচ্ছে না বায়ু আর শব্দের ‍দূষণও। যে ঢাকা বায়ুদূষণের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় শহরগুলোর মধ্যে প্রথম কাতারে ছিল, সেখান থেকে এখন নেমে গেছে কয়েক ধাপ। করোনার ভয়ঙ্কর থাবায় হতাশার শহরে এ যেন নতুন আশার খবর।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী শনিবার (১৭ এপ্রিল) বায়ু দূষণের মানমাত্রায় ঢাকায় পয়েন্ট ১০২, অবস্থান আট নম্বরে। অথচ এই লকডাউনের আগে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থাকতো শীর্ষে, ১ নম্বরে বা তার আশপাশে। ৩০০ থেকে ৪০০ পর্যন্ত থাকতো পয়েন্ট। যেটাকে বলা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’ আবহাওয়া।
গতকাল রাতে বৃষ্টির কারণে ধুলোবালি আরও কমেছে। ফলে বাতাসের বিশুদ্ধতা বেড়েছে। গতকাল দিনের বেলায় এই মানমাত্রা ছিল ১০০ থেকে ১৫০ এর মধ্যে। লকডাউনে ফাঁকা ঢাকার রাজপথ লকডাউনে ফাঁকা ঢাকার রাজপথ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) বলছে, লকডাউন শুরুর পর ১৪ এপ্রিল থেকে দিনের কোনও কোনও সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৭০ ভাগ বায়ু দূষণ কমেছে, সারাদিনের হিসেবে ৫৫ ভাগ কমেছে।
ক্যাপস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় জীবিকার তাগিদে বহুলোকের আনাগোনা লেগেই থাকে। এসব মানুষকে বহন করে রাজপথে ছুটে বেড়ায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। এখন এগুলো চলছে না বললেই চলে। সাধারণ মানুষ লকডাউনের এই সময়টা সাধারণত ঘরেই কাটাচ্ছেন। আর এতে করে বায়ুর দূষণও কমেছে। লকডাউনে ফাঁকা ঢাকার রাজপথ লকডাউনে ফাঁকা ঢাকার রাজপথ ঢাকার মাঝ বরাবর নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেল। এর পাইলিং এবং পিলার তৈরির সময় ঢাকার বাতাসে ব্যাপক মাত্রায় ধুলা ছড়িয়ে পড়তো। এখন মেট্রোরেলের নিচের অবকাঠামোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ দিকে। চলছে ওপরের অংশেল কাজ। এ কারণেও বাসাতের দূষণ খানিকটা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্যাপস বলছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ১১ ভাগ, ফেব্রুয়ারিতে ৫ ভাগ এবং মার্চ মাসে ২১ ভাগ বায়ুদূষণ বেড়েছে।
লকডাউন চলাকালে প্রতিদিন ঢাকার দুটি এলাকায় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আট ঘণ্টা করে বায়ুর মান পরিমাপ করছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে। লকডাউনে ফাঁকা ঢাকার রাজপথ লকডাউনে ফাঁকা ঢাকার রাজপথ ক্যাপস এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মো.কামরুজ্জামান বলেন, ক্যাপস প্রতিদিন ঢাকার যে কোনও দুটি এলাকায় বায়ু দূষণ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। মতিঝিল, আহসান মঞ্জিল এলাকা, শাহবাগ, ধানমণ্ডি, সংসদ এলাকা, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, আগারগাঁও বিসিএস কম্পিউটার সিটির রাস্তা, মিরপুর ১০, গুলশান ২, আব্দুল্লাহপুর এসব এলাকার মধ্য থেকে যে কোনও দুটি বেছে নেওয়া হয়। পরদিন অন্য এলাকার তথ্য নেওয়া হয়। এক বছর ধরে সপ্তাহে পাঁচ দিন আমরা এই তথ্য সংগ্রহ করবো। ইউএসএইড এবং ইউকেএইড অর্থায়নে এই কাজ করছি।
মোটাদাগে বলা হয়ে থাকে, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ থেকে দূষণ হয় ৩০ ভাগ, ২৯ ভাগ হয় ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে, ১৫ ভাগ যানবাহনের কালো ধোয়া থেকে। ১০ ভাগ আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ এবং ৯ ভাগ গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষণ।
বছর ব্যাপী গবেষণা করে ক্যাপস গত মার্চে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে বলা হয়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে আশঙ্কাজনকভাবে দিন দিন বাড়ছে দূষণের মাত্রা।
২০২০ সালে বাংলাদেশের বাতাসে গড় ধুলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম। যা পরিবেশ অধিদফতরের আদর্শমানের সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি। এর মধ্যে ঢাকার ৭০টি স্থানের দূষণ গবেষণা করে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের বায়ুদূষণের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে বাতাস পাঁচ দশমিক ২ গুণ বেশি দূষিত।
দূষণ কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, যানবাহন, ইটভাটা, খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে মূলত বায়ু দূষণের কারণ। লকডাউনের কারণে এখন কমে আসলেও তা তো সাময়িক। সব খুলে দিলে আবার তো আগের অবস্থা হয়ে যাবে। তাই এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। দূষণ কমানোর এই ঘটনায় প্রমাণিত হলো, এতদিন আমরা যেসব উৎসকে কারণ হিসেবে বলেছি সেগুলা সঠিক। সরকার যদি আমাদের চিহ্নিত উৎসগুলো থেকে দূষণ কমানোর উদ্যোগ নেয় তাহলে দূষণ কমে যেতো। তবে সরকারের এ বিষয়ে মানসিকতা আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট এর খসড়া করে ফেলে রেখেছে। ফলে উদ্যোগ নেওয়াটাই একটা বড় বিষয়।