সকাল ৭:২৩,   শুক্রবার,   ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১২ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২৩শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নারায়ণগঞ্জে সহিংসতায় মামুনুল জড়িত: সিআইডি

নিউজ সুনামগঞ্জ ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রতিক সহিংসতায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান এ কথা জানান। ওই মামলায় সিআইডির পক্ষ থেকে তার রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের সাম্প্রতিক সহিংতার ঘটনায় করা ২৩ মামলার দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি।
এ সব মামলার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘২৩টি মামলার সবগুলোই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যেই নারায়ণগঞ্জের একটি মামলায় হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
‘সে মামলায় আমরা তার রিমান্ড চাইব। তাছাড়া অন্যান্য মামলায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ধারাবাহিকভাবে সব মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হবে।’
এসব ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মালা তদন্ত করতে গিয়ে যাদেরই জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

ব্রিফিংয়ে সিআইডিপ্রধান আরও বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও চট্টগ্রামের একাধিক মামলারও তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি। ২০১৬ সালের পাঁচটি মামলা ও সাম্প্রতিক সময়ের ১৮টি মামলাসহ ২৩টি মামলার তদন্ত করবে সিআইডি।
‘আমরা আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ করব এবং যারা এখনও আইনের আওতায় আসেনি তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব। হামলা, ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনায় যারা উপস্থিত ছিল, মদদ দিয়েছে, উসকানি দিয়েছে, জ্বালাও-পোড়াও করেছে তাদের ভিডিও ফুটেজ ফরেনসিক করা হবে। ফরেনসিক করে যাদের পাওয়া যাবে তাদের সবাইকেই আমরা আইনের আওতায় আনব।’

মামুনুলের রিমান্ড
ভাঙচুরের মামলায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারী সোমবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে এই আদেশ দেন।
মোহাম্মদপুর থানায় ভাঙচুরের মামলায় মামুনুলকে সাত দিনের রিমান্ডে পেতে আবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজেদুল হক।
রিমান্ড বাতিল চেয়ে মামুনুলের পক্ষে শুনানি করেন জয়নাল আবেদীন মেসবাহসহ কয়েকজন আইনজীবী। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, আজাদ রহমানসহ জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাকে সাত দিনের রিমান্ড আদেশ দেন বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারী। শুনানি শেষে মামুনুলকে ডিবির কার্যালয়ে নেয়া হয়।
রোববার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মামুনুল হককে।
মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে। সেখান থেকেই সোমবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে আদালতে তোলা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় সাম্প্রতিক সহিংসতা ও রিসোর্ট-কাণ্ডে রাজধানীর পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দুটি মামলা হয় মামুনুলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর তাণ্ডবের ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মামুনুল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছিলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রিসোর্ট-কাণ্ডের পর থেকে মামুনুল হককে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
৩ এপ্রিল রিসোর্ট-কাণ্ডের পরদিন ওই মাদ্রাসায় হেফাজত নেতারা জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মামুনুল হক। এরপর আর তাকে সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।
সোনারগাঁয় রিসোর্ট-কাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে মামুনুল হকের তীব্র সমালোচনা করেন। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেপ্তার হতে থাকেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকটি সূত্র সে সময় জানায়, মামুনুল হকও যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, মামুনুল হক সুপরিকল্পিতভাবে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক দেখলেন তার কথায় তো অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে, অনেক সমর্থক তার, উনি যা বলছেন তারা তাই করছেন। ভাস্কর্যবিরোধী বিক্ষোভ থেকে শুরু করে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে তিনি যা বলেছেন, তাই হয়েছে। তখন তিনি ভাবলেন জামায়াত-বিএনপি তার সঙ্গে আছে, তিনি তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে পারবেন।
‘সমমনাদের নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার একটা চিন্তা তার মধ্যে চলে এসেছিল। বড় নেতা হতে চেয়েছিলেন, তাই তার বক্তব্যের ধরন পাল্টে গিয়েছিল। কিন্তু আইনের ব্যত্যয় যারাই করেছেন তারা কেউ ছাড় পাবে না, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’