রাত ১:২২,   শনিবার,   ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১২ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ফের লকডাউনের সিদ্ধান্ত , দ. সুনামগঞ্জে জনমনে উৎকন্ঠা

নোহান আরেফিন নেওয়াজ, দ.সুনামগঞ্জ:
গেলো বছর করোনার কারণে দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে আর্থিকভাবে মারাত্নক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষেরা। লকডাউনকালীন বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই জীবনযুদ্ধ করছিলেন এই উপজেলার নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ।
এমন বাস্তবতায় দেশে পূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে তৃতীয় দফায় বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। করোনার সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে আনতে আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এমন বার্তা দিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
ফের লকডাউনের এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের কাছে যেনো অনেকটা ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন এই উপজেলার নিম্ন ও নিম্নবিত্তশ্রেণীসহ সংখ্যাগরিষ্ট মানুষেরা।
উপজেলার পাগলা বাজার ব্রিজের পাশেই রয়েছে হাবিবুর রহমানের চায়ের দোকান। তিনভাইয়ের শ্রমে চলে চায়ের দোকানটি। সেই দোকানের উপার্জন দিয়েই চলে তাদের বারো সদস্যের সংসার।
হাবিবুর রহমান বলেন, এনজিও লোন নিয়ে দোকানটি করেছিলাম। এই দোকানের আয়ের মাধ্যমেই লোন পরিশোধ ও সংসার চালাতে হয়। আবার লকডাউন হলে আমিসহ পুরো পরিবার আবারও দুর্ভোগে পড়বেন।
লকডাউনের খবরে সেলুনের কারিগর নারায়ন চন্দ বলেন, আবার লকডাউন হলে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবো। সেলুনের আয়ই আমার সংসার চালানোর একমাত্র মাধ্যম। যদি লকডাউন দিতেই হয় আমাদের দিকটা যেনো সরকার ভেবে দেখেন।
সারাদিন গরম লোহা পিঠিয়ে দা-বটিসহ লোহার তৈরী জিনিসপত্র তৈরী করে বিক্রি করেন লাপ্পন নামের একজন। ফের লকডাউনের খবরে তার কপালে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ। তিনি বলেন, লকডাউন হলে আমাদের না খেয়ে মরার মতো অবস্থা তৈরী হয়। এমনিতেই গতবছরের ক্ষত সেরে উঠতে পারছিনা। এখন আবার লকডাউন হলে না খেয়েই মরতে হবে।
দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও। তবে লকডাউনের খবরে সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। বৈশাখ মাসকে সামনে রেখে কষ্টের সোনালী ধান ঘরে তুলতে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। শ্রমিক সংকট থাকায় ধান কাটার জন্য শ্রমিক আনতে হয় সিলেট বিভাগ বহির্ভূত অঞ্চলসমুহে। তবে লকডাউন হলে দুরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হলে মারাত্নক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তারা। যদিও লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে কি না সেটি প্রজ্ঞাপণ জারী হলেই বুঝা যাবে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। যদি দুরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকে তবে শ্রমিক সংকট দেখা দিবে। ফলে কষ্টের সোনালী ধান সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হবে কৃষকদের।
এব্যাপারে কৃষক খালেদ মিয়া বলেন, আমাদের সংসার কৃষি নির্ভর। গতবছর লকডাউনে শ্রমিক সংকট ছিল। তবে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ ধান ঘরে তুলতে সহযোগীতা করেছিলেন। তবে এবছর যদি লকডাউনে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয় তবে খুব বিপাকে পড়তে হবে। তাছাড়া গতবছরের মতো এবছর ধান কাটায় সহযোগী না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে ধান ঠিকমতো তুলতে পারবো কি না সংশয় রয়েছে।
এছাড়া গেলো বছর দক্ষিণ সুনামগঞ্জে লকডাউন চলাকালে সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ খাদ্যসামগ্রী, আর্থিক অনুদান বিতরণ করেছিলেন। তবে এবছর সেসব সাহায্য পাওয়াটাও অনিশ্চিত।