বিকাল ৩:৩৩,   শুক্রবার,   ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১২ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময়

নিউজসুনামগঞ্জ ডেস্ক:
‘এক সপ্তাহের জন্য ব্যাংক এভাবে আগে কখনও বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু ব্যাংক সেবা একবারে বন্ধ করে দেয়ায় বড় সংখ্যাক মানুষ সমস্যায় পড়বে। অন্যান্য বিষয় বাদ দিলাম, চিকিৎসা করতেও মানুষের টাকার প্রয়োজন হবে।’
‘হঠাৎ এভাবে ব্যাংক বন্ধ আগে কখনও হয়নি। শুধু নগদ টাকা জমা ও তোলা সেবা চালু রাখা উচিত ছিল’-মন্তব্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে বিস্মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যাংক বন্ধ থাকলে ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থাপনা হবে একমাত্র ভরসা। কিন্তু দেশের কত শতাংশ মানুষের হাতে এই সুবিধা আছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
ব্যাংক বন্ধ থাকলেও পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের মতো সেবা খাতের বিলের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি সরকার। ফলে এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত না এলে ব্যবহারকারীদের ঘাড়ে জরিমানার বোঝা চেপে বসতে পারে। এই বিষয়েও সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত চেয়েছেন তিনি।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য বাইরে জনসমাগমে বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংক খোলা ছিল আড়াই ঘণ্টার জন্য। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলেছে লেনদেন।
এতে কাজ না হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউনের ঘোষণা আসে গত শুক্রবার। তিনি জানান, জরুরি সেবা ছাড়া এবার বন্ধ থাকবে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংক খাতকে জরুরি সেবা হিসেবেই ধরা হয়। কেন্ত্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সেদিন বলেন, ব্যাংক খোলা রাখার বিকল্প নেই।

সেদিন তিনি বলেন ‘এ সংকটের মধ্যেও ব্যাংক খোলা রাখতে হবে। কারণ, মানুষ ব্যাংকিং লেনদেন না করতে পারলে অন্যান্য সংকটে পড়বে। চিকিৎসার জন্যও ব্যাংকের টাকা দরকার। সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে, কোন কৌশলে ব্যাংকিং সেবা দেয়া যায় সেটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তবে সোমবার সরকার বিধি নিষেধ নিয়ে যে প্রজ্ঞাপন দেয়, তাতে জানানো হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। এরপর বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর সিদ্ধান্ত আসে, এই সাত দিনে কেবল বন্দরকেন্দ্রিক শাখাগুলো খোলা থাকবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ (বামে) ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর এই সিদ্ধান্তে চমকে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এক সপ্তাহের জন্য ব্যাংক এভাবে আগে কখনও বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু ব্যাংক সেবা একবারে বন্ধ করে দেয়ায় বড় সংখ্যাক মানুষ সমস্যায় পড়বে। ‘অন্যান্য বিষয় বাদ দিলাম, চিকিৎসা করতেও মানুষের টাকার প্রয়োজন হবে।’

ব্যাংক বন্ধ থাকায় এটিএম বুথে ভিড় বাড়বে বলে মনে করেন সাবেক এই গভর্নর। বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু নগদ টাকা তোলা ও জমা এ দুইটি সেবা চালু রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে পারত। কারণ, এটিএমবুথে টাকা তোলাতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ, সেখানে বাটন স্পর্শে টাকা তুলতে হয়।’
‘সেক্ষেত্রে সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত শুধু নগদ লেনদেন চালু রাখা সম্ভব ছিল। আর ব্যাংক একটা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারত’-বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আবার এটিএম বুথ কেবল শহরাঞ্চলে আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সুবিধা নেই। সেখানকার মানুষ নগদ টাকার প্রয়োজন কীভাবে মেটাবে, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। ব্যাংক বন্ধ থাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে চাপ পড়বে। কিন্তু সেখানেও ভোগান্তি তৈরি হবে।

সালেহউদ্দিন বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রেও তো টাকা লাগবে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় সেই টাকা এজেন্টরা কোথা থেকে তুলবে?’
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্ত ব্যবসা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সীমিত পরিসরে চালু রাখা উচিত ছিল। সাধারণ মানুষের টাকা দরকার হলে কীভাবে পাবে? সবার তো এটিএম কার্ড নেই। আর এটিএম বুথে যদি পর্যাপ্ত টাকা না থাকে তখন তো মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। আবার সব ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং সেবাও নেই।’
এই অর্থনীতিবিদের ধারণা, করোনা ঠেকাতে মানুষের বাইরে যাওয়ার বিধিনিষেধ সপ্তাহ শেষে বাড়ানো হলেও ব্যাংক খুলে দিতে হবে।