বিকাল ৩:৩৩,   শুক্রবার,   ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১২ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি

নিউজসুনামগঞ্জ ডেস্ক:
গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর শহরাঞ্চলে হয়েছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
প্রধান খাদ্যপণ্য চালের চড়া দামের কারণে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির পারদ এখন বেশি চড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মার্চে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর শহরাঞ্চলে হয়েছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারিতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২০ সালের মার্চ মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২১ সালের মার্চে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৪৭ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
চাল, ভোজ্যতেল, চিনিসহ আরও কয়েকটি পণ্যের চড়া দামের কারণে মার্চ মাসে দেশের মানুষকে এই বাড়তি খরচ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস।
জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ০২ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। সাত বছর পর ২০২০ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করে ৬ দশমিক ০২ শতাংশে উঠেছিল। নভেম্বরে অবশ্য সামান্য কমে তা ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে আসে।
পরের দুই মাস ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক নিম্নমুখী ছিল। ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। মঙ্গলবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, চাল, ব্রয়লার মুরগি, ভোজ্য তেল, চিনি ইত্যাদির বাড়তি দামের কারণে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মার্চে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত দুই খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ; জানুয়ারিতে যা ছিল ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
অন্যদিকে খাদ্য বর্হিভূত খাতে মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ১৭।

মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মার্চে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ৩০ ভাগ। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে গ্রাম ও শহর এলাকায় খাদ্য ও খাদ্য বর্হিভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যালোচনায় বিবিএস বলেছে, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে চাল, ব্রয়লার মুরগি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনির দাম বেড়েছে। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে মূলস্ফীতি কেন বেশি, সে ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি পরিসংখ্যান ব্যুরো।
এ ব্যাপারে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইস মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, এমন হতে পারে, গ্রামের সব পণ্য শহরে চলে আসার কারণে শহর এলাকায় পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে যায়। অন্যদিকে গ্রামে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় দাম বাড়ে। সে কারণেই শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়ে থাকতে পারে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) ৬০ থেকে ৬৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের চাল (পাইজাম) বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায়। আর মোটা চাল (স্বর্ণা) বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়।
টিসিবির তথ্যই বলছে, ২০২০ সালের ৯ মার্চ রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। মাঝারি মানের চালের কেজি ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। মোটা চালের ছিল ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা।
টিসিবি এই তথ্য তুলনা করে হিসাব দিয়েছে, গত এক বছরে শুধু চালের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দর বেড়েছে ১৭ দশমিক ০২ শতাংশ। আর মোটা চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে থমকে যাওয়া অর্থনীতি সচল করতে বাজারে বাড়তি মুদ্রাপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি থাকলেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার।