বিকাল ৩:৩৫,   শুক্রবার,   ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১২ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নলজুর নদীর খনন কাজ শেষ না করেই ‘পালালো’ লুটপাটে অভিযুক্ত ঠিকাদার

রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর:
জগন্নাথপুরের নলজুর নদী খনন কাজ শেষ না করে চলে গেছে টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এই নদী খনন কাজের শুরু থেকেই টিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নামমাত্র কাজ করে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদার পালিয়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সোমবার (১২ এপ্রিল) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশন টেক কাজ বন্ধ করে মালামাল নিয়ে চলে গেছে। উপজেলাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জগন্নাথপুর পৌর শহরের বাদাউড়া থেকে এরালিয়া বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদী খননের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশন টেক লিমিটেড ঢাকা। সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দে গত ১৮ জানুয়ারি কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। (অপরিকল্পিত খননে নদীর অসিত্ব হুমকির মুখে। ছোটছোট নৌচলাচল বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা)
নলজুর নদী খননের শুরুতে নদীকে খালে পরিণত করার অভিযোগ এনে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হলে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা ও জগন্নাথপুর উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা খনন কাজ পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিকল্পিত নদী খননের দাবি জানান। এরপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে নদী খনন কাজ করতে থাকে। এমনকি পাউবোর এসও হাসান গাজী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী কামরুজ্জামান ও সুপারভাইজার খায়রুল ইসলাম মিলে নদী খননের মাটি বিক্রি, নদীর পাড়ে থাকা অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ,জায়গা জমি,পুকুর ভরাট করে দেওয়া সহ নানা আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এবিষয়ে এলাকাবাসী জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান কে অবহিত করলে তিনি নদী খননের কাজ পরিদর্শন করে খননের কাজে অনিয়মের কথা তুলে ধরে পর পর তিনটি চিঠি জেলা প্রশাসক ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দেন। চিঠিতে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান উল্লেখ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী নলজুর নদী খনন কাজ শেষ হয়েছে জানালে নদী খনন কাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়,নদীটি সঠিকভাবে ও প্রস্ত অনুযায়ী খনন করা হয়নি। নদীর মধ্যবর্তীস্হানে মাটি রাখায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে খননকৃত মাটি আবার নদীগর্ভে গিয়ে পানি প্রবাহে ব্যঘাত করবে। এবং নদীর তীর আরও দখলের সম্ভাবনা রয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব
বলেন, বর্তমান নকশা অনুযায়ী নলজুর নদী ২২০ ফুট প্রস্ত রয়েছে। আমরা নদী রক্ষায় বর্তমান নকশা অনুযায়ী নলজুর নদী খনন করতে দাবি জানিয়েছিলাম। তিনি বলেন,এভাবে অপরিকল্পিত নদী খনন কাজ করায় নদীটির অসিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরাম যুগ্ম আহ্বায়ক রুমানুল হক রুমেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজশে নলজুর নদী খনন নিয়ে সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ লুটপাট করার পায়তারা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দায়সারা খনন কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করে মালামাল নিয়ে চলে গেছে। (খননকৃত নদীর মধ্যস্হলে এক মা তার শিশু কে নিয়ে বসে আছেন)
নাগরিক ফোরাম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, এক সময় নলজুর নদী দিয়ে বড় বড় নৌযান চলাচল করত। নামমাত্র নদী খননে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এরকম নদী খনন জীবনে দেখিনি।
নদীর খননকৃত মাটি না সরিয়ে নদীতে রাখার হয়েছে। বৃষ্টি হলে এ মাটি আবার নদীতে মিশে যাবে। এধরনের নদী খনন কোন সুফল মিলবে না।
(নদীতে স্তুপকৃত মাটি সরানো হয়নি। বৃষ্টি হলে খননকৃত মাটি আবার নদীতে মিশে যাবে )
নলজুর নদী খনন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশন টেক এর প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান বলেন, করোনার কারণে সোমবার থেকে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে । মাটির কাটার যন্ত্র ২৫ টির মধ্যে এখনো প্রকল্প এলাকায় চারটি রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা পালিয়ে যাইনি। প্রাক্কলন অনুযায়ী নলজুর নদী খনন কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কে জানিয়ে যাচ্ছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, নলজুর নদী খনন নিয়ে অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে আমি তিনটি চিঠি জেলা প্রশাসক ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কে জানিয়েছি। (নদীর পাড়ে অবৈধ দখলদারদের মাটি দিয়ে আরও দখলের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে)
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদৌহা জানান, নলজুর নদী খননের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শহর এলাকায় ১৬০০ ফুট আংশিক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। নদীতে থাকা মাটি সরানোর বিষয়টি প্রাক্কলনে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রাক্কলন সংশোধন করে মাটি সরানোর পদক্ষেপ নেব।