উত্তাপ ছড়িয়েছে লন্ডনে: জগন্নাথপুর-সিলেট সড়ক সংস্কারের দাবিতে কাল থেকে ধর্মঘট
![](https://newssunamganj.com/wp-content/uploads/2020/08/received_227085955408248-1024x768.jpeg)
রেজুওয়ান কোরেশী :
দায়িত্বহীনতা আর গাফিলতির কারণে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলাবাসীর যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন জগন্নাথপুর-সিলেট (জগন্নাথপুর -বিশ্বনাথ- রশিদপুর) সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে অনুপযোগি হয়ে উঠেছে। বারবার সংস্কারের দাবি উঠলেও দাবিটি বারবার উপেক্ষিত হওয়ায় এবার সড়ক সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথপুর ও লন্ডনে কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি ও এলাকাবাসী জানায়, সিলেট বিভাগীয় শহরসহ ঢাকার রাজধানীর সঙ্গে জগন্নাথপুর ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কয়েকলাখ মানুষ জগন্নাথপুর -বিশ্বনাথ- রশিদপুর সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এই সড়কে বেহালদশা বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের জগন্নাথপুরের ১৩ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ কাজটি পান সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরা এন্টারপ্রাইজ । ওই প্রতিষ্ঠান কিছু কাজ করে বন্ধ করে দেয়। এরপর স্থানীয় এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নামমাত্র কাজ করে অর্থ লুট করা হয়েছে বলে একটি অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগ উঠে কাজের তিন মাসের মাথায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। দীর্ঘকাল থেকে এ সড়কে কাজের নামে সরকারি অর্থ লুট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে আসছে। ২০১৮ সালে ১০ লাখ টাকার জরুরী সংস্কার করা হয়। এর কিছুদিন পর ২০১৯ সালে সড়কের বেহাল দশা দেখা দিলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়কে অস্থায়ী মেরামতের জন্য ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কাজ পায় সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেনু এন্টারপ্রাইজ। যৎসামান্য মেরামত করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ২৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করা হলে কাজটি পায় মাদারীপুরেরর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হামীম সালেহ (জেভি)। চুক্তি অনুয়ায়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে সড়কে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মার্চের প্রথম দিকে কাজ শুরু হয়। চুক্তি মোতাবেক আগামী বছরের ৩১ মার্চ কাজ শেষ করার কথা। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভার দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। সম্প্রতিকালে ঝড়-বৃষ্টির সময় সামান্য কাজ করে ফের বন্ধ হয়ে যায় কাজ। ফলে অব্যাহত বৃষ্টি আর বন্যার তিন দফা বন্যায় প্রায় অচল হয়ে পড়ে সড়ক। সম্প্রতি এ সড়কের জগন্নাথপুর পৌরএলাকার বটেরতল নামক স্থানে একটি গর্তে পড়ে অটোরিকশায় থাকা সন্তানসম্ভাবনা এক নারী সড়কেই সন্তান প্রসব করেছেন। এঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে। সংস্কারের অভাবে দিন দিন সড়কে নাজুক অবস্থায় সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় সংস্কারের দাবীতে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ধর্মঘটের ডাক দেয়। অপরদিকে জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কের সংস্কারের দাবীতে ‘‘ আমরা জগন্নাথপুরবাসী, জন্মস্থান-কে ভালোবাসি” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের সুটন শহরে আগামী ৬ সেপ্টেম্বরর যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জগন্নাথপুরের সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রচার চলছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিজামুল করিম জানান, জনগুরুত্বপূর্ন এই সড়কটি সংস্কারের অভাবে যানচলাচলে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। সংস্কারের দাবীতে আমরা একাধিকবার পরিবহন ধর্মঘট কর্মসুচী গ্রহণ করেছি। সংস্কারের আশ্বাসে কর্মসুচী বাববার প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে সড়কে বেহাল দশা বিরাজ করছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কর্মসুচী দিয়েছি। গত দুই তিন মাস ধরে সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে। আমাদের কর্মসুচীর একদিন আগে হঠাৎ করে আজ সোমবার দুই তিনজন শ্রমিক দিয়ে সড়কের একাংশে কাজের নামে নাটক করা হচ্ছে। আজ থেকে ধর্মঘট চলবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার সাকলাইন হোসেন জানান, করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে সংস্কার কাজ ব্যাহত হয়েছে। তবে আজ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) গোলাম সারোয়ার বলেন, এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক আইডিএ এর অর্থায়নে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ২৫ কোটি ৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সড়কের কাজ শুরু হয়েছে।