বিকাল ৫:০৪,   শনিবার,   ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

টাঙ্গুয়ার হাওরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেতে পারবেন পর্যটকরা

দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী :
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি), জাদুকাটা, বারিক্কার টিলাসহ জেলার বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্থানে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখো পর্যটক ঘুরতে আসেন। কিন্তু করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত ১৯ মার্চ থেকে সুনামগঞ্জের দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
নিষেধাজ্ঞা জারির প্রায় পাঁচ মাস পর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলার তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর, জাদুকাটা, বারিক্কার টিলা, সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজাসহ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটক এবং স্থানীয় নৌকার মাঝিদের জন্য কিছু শর্ত দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনা মহামারি শুরুর পর সরকারের দেওয়া নির্দেশ মোতাবেক সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সব দর্শনীয় স্থানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রাণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পর্যায়ে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই আলোচনায় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থানীয় প্রশাসন এবং পর্যটনের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় গ্রুপকে সঙ্গে নিয়ে সভা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের ভ্রমণে আসার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানানো হয়। সেইসঙ্গে কিভাবে সুনামগঞ্জের পর্যটন সেবার দ্বার আরো বেশি উন্মুক্ত করা যায় সেই বিষয়েও আলোচনা করা হয়। একই ভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যারা ভ্রমণে আসবেন তারা অবশ্যই নির্দেশনা মানবে এবং স্থানীয় গ্রুপ নৌকায় যারা ভ্রমণ করবে সেই নৌকার সবার যেন মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকে ও যাত্রীর সংখ্যা সীমিত থাকতে হবে। নৌকার যাত্রীদের অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, নৌকায় উচ্চস্বরে মাইক বাজানো যাবে না। জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ে এমন কিছু করতে পারবে না এবং পর্যটকরা ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলতে পারবে না। স্থানীয় নৌকার মাঝি ও পর্যটকেরা সব নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। তা না হলে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, টাঙ্গুয়ার হাওরে করোনা কারণে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও ঈদের পর থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমণে আসেন এবং তাদের কেউ কোনো রকম স্বাস্থ্য বিধি মানেনি। এমনকি মাস্কও মুখে পড়েনি। হাওরে গভীর রাতেও উচ্চস্বরে মাইক দিয়ে গান বাজানো হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরসহ জেলার সব দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণে আসতে চায়। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা কাউকে ভ্রমণের অনুমতি দেইনি। কিন্তু বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রাণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পর্যায়ে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই সভায় জেলার সব বিভাগের কর্মকর্তা এবং শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সীমিত আকারে ভ্রমণের বিষয়ে একমত হলে আমরা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, সদর, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুরসহ সব দর্শনীয় স্থানে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণের জন্য খুলে দিয়েছি। তবে আমরা পর্যটক ও স্থানীয় গ্রুপকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি।’
‘স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যারা ভ্রমণে আসবে তাদের অবশ্যই নির্দেশনা মানতে হবে। নৌকায় যারা ভ্রমণ করবে সেই নৌকার সবার মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকতে হবে। যাত্রীর সংখ্যা সীমিত থাকতে হবে। নৌকার যাত্রীদের অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো আচরণ করা যাবে না। নৌকায় উচ্চস্বরে মাইক বাজানো যাবে না। জীববৈচিত্র হুমকিতে পড়ে এমন কিছু করা যাবে না। ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না।’