করোনা : রিকশা নিয়ে বের হয়েও ঘরে খাবার নেই তাদের!
স্টাফ রিপোর্টার :
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ঘরে থাকার নিষেধাজ্ঞায় কপাল পুড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। রাস্তায় জনসমাগম না থাকায় বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও রিকশা চালকরা।
মালিকের কাছ থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়েও দিন শেষে ভাড়ার টাকাই উঠছে না। বেশিদিন এ অবস্থা থাকলে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে রিকশা চালকদের।
একদিকে সংসার চালানোর চিন্তা অন্যদিকে মালিকের রিকশা ভাড়া পরিশোধ করা; সবমিলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তবে তাদের দাবি, সরকার থেকে যদি খাবার দেয়া হয় তাহলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হবেন না।
সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, ট্রাফিক পয়েন্ট, কালীবাড়ি রোড, হোসেন বখত চত্বর ও ষোলঘর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা ফাঁকা। মানুষজন রাস্তায় নেই। নেই কোনো গাড়ির শব্দ। তবে মোড়ে মোড়ে রয়েছেন কয়েকজন রিকশা চালক। রিকশার হুড তুলে বসে আছেন কেউ কেউ।
করোনাভাইরাসের কারণে যখন দেশের মানুষ গৃহবন্দি তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন তারা। সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হলেও তাদের কাছে পৌঁছায়নি।
রিকশা মালিকের দৈনিক ভাড়া ৬০ টাকা হলেও তা তুলতে পারছেন না চালকরা। আবার অভাবের কারণে যাত্রীদের কাছে পাঁচ টাকা বেশি চাইলেও নানারকম কথা শুনতে হয় তাদের।
রিকশাচালক চন্দন সরকার বলেন, দিন চলছে খুব কষ্টে ভাই। আজ সারাদিনে ১০০ টাকাও আয় হয়নি। এভাবে কি জীবন চলে। মরণ ছাড়া তো উপায় নেই। খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। রিকশা মালিকের টাকা দিতে হবে। খাবার কিনতে হবে। কি করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।
সাত বছর ধরে সুনামগঞ্জ শহরে রিকশা চালান কুদ্দুস মিয়া। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চলাফেরা আগের মতো নেই। সরকার যখন সব বন্ধ করে দিয়েছে তখন আমাদের ঘরে চাল-ডাল দেয়নি কেন? এই করোনা কবে শেষ হবে। কবে ঘরের চুলায় আগুন জ্বলবে আমাদের। আমরা আর পারছি না।
৪০ বছর ধরে সুনামগঞ্জ শহরে রিকশা চালানো আব্দুল মোতালিব বলেন, সরকার সব বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে আমরা ঠিকমতো খাইতে পারি না। সকালে খাইলে রাতে না খেয়ে থাকতে হয়। আমাদের আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। একদিন রিকশা না চালাইলে খাবার জোটে না আমাদের। এখন তো রাস্তায় মানুষই নেই। আমরা কিভাবে চলব, কিভাবে সংসার চালাব।
শুধু রিকশাচালক নয়, করোনার ঝুঁকি এড়াতে কপাল পুড়েছে ঠেলাগাড়ি চালক, সিএনজি চালক এবং অটোরিকশা চালকদের। পেটের দায়ে রাস্তায় বের হয়েও মিলছে না যাত্রী।
সিএনজি চালক মুবিন আহমদ বলেন, শুধুমাত্র পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। তবে গলির রাস্তা থেকে মূল রাস্তায় যেতে পারি না। পুলিশ বাধা দেয়। এজন্য মহল্লায় চালাই। এখানেও মানুষ নেই। করোনায় মরার আগে না খেয়ে মরতে হবে আমাদের। সারাদিনে ১০০ টাকাও আয় হয়নি। কিভাবে সিএনজি মালিকের ভাড়ার টাকা দেব, আর পরিবারের জন্য খাবার কিনব, তা ভেবে পাই না।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, সরকারের দেয়া খাদ্যসামগ্রী আমরা গরিবদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছি। সরকারের নির্দেশনা রয়েছে যেন প্রকৃত অসহায়রা ত্রাণ পায়। আমরা দেখে দেখে প্রকৃত অসহায়দের ত্রাণ দিচ্ছি।