সন্ধ্যা ৭:০৩,   বৃহস্পতিবার,   ৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

তামাক উৎপাদন ও তামাক জাতীয় পণ্য নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়: শিল্পমন্ত্রী

নিউজ সুনামগঞ্জ ডেস্ক :
তামাক উৎপাদন ও তামাকজাত পণ্য নিষিদ্ধ বা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। তিনি বলেছেন, এই শিল্পের উদ্যোক্তারা সরকারের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করেন। তারা সরকারের সব নিয়ম-কানুন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ জাতীয় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকারকে দেওয়া রাজস্বের বিষয়টিও ভাবতে হবে। একইভাবে এ শিল্পের সঙ্গে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি এবং শ্রমিকের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও জড়িত। তাদের কথাও ভাবতে হবে। বুধবার (২০ মে) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। 
এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তামাক পণ্য নিষিদ্ধের অনুরোধ করে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেই চিঠির জবাবে আমরা এই বিষয়টি তাদের জানিয়ে দেবো। তিনি বলেন, ‘তামাক যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা বোঝাতে হলে এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মোটিভেশন ছাড়া শুধুমাত্র সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না।’ এতে চোরাচালান বাড়বে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বুধবার (২০ মে) বিকালে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে তামাক উৎপাদন এবং তামাক জাতীয় পণ্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার আব্দুল জলিল স্বাক্ষরিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে— তামাকজাত শিল্পের উৎপাদন বন্ধ করলে, তা হবে জাতীয়ভাবে মারাত্মক ক্ষতি।
শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ব্যাখ্যায় আরও  বলা হয়, টোব্যাকো বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি এবং  শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি জড়িত। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও শিল্পোন্নত দেশগুলোসহ গোটা বিশ্বে এখনও পর্যন্ত তামাক শিল্প চালু রয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে এককভাবে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমাদের জাতীয় রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এই শিল্পখাত থেকে আসে। সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এই শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হলে, একদিকে যেমন দেশ বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে তেমনই বিপুল পরিমাণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। আবার তামাক পাতা না কিনলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা দেবে। ফলে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, ধূমপান কিংবা তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর সেবনকারীরা তা জেনে-শুনেই সেবন করছেন। এ শিল্প সাময়িককভাবে বন্ধ করে দিলেও, তারা এটি সেবন করবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মোটিভেশন ছাড়া শুধুমাত্র সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। অধিকন্তু, এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে এবং আমদানিকরা সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের মাধ্যমে দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় হারাবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’ ধূমপায়ী ও তামাক জাতীয় পণ্য সেবীদের মাঝে এটি পরিহারের জন্য প্রচার জোরদার করতে পারে।
করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিও যথেষ্ট চাপে রয়েছে এবং আগামী দিনে অনিবার্যভাবে এই চাপ বাড়বে। করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটা স্থবির হয়ে রয়েছে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক লোকজন বেকার হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের জন্য দীর্ঘদিন এটি চালিয়ে নেওয়া কষ্টকর হবে। এই অবস্থায় বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং শিল্প উৎপাদন বন্ধ করলে, তা হবে জাতীয় মারাত্মক ক্ষতি।
সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্য সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সময়ের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মোটিভেশনাল কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যের সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনও ভিন্নতা নাই। শিল্প মন্ত্রণালয়ও প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার নীতিকে পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্থন করে এবং এ লক্ষ্যে কাজ করছে।