সকাল ৯:৫২,   শুক্রবার,   ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

তাহিরপুরে রাতঅব্দি খোলা দোকানপাট, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

আবির হাসান-মানিক :
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র রমজান ও ঈদ সামনে রেখে শর্তসাপেক্ষে ১০ মে থেকে দোকান-পাট খোলার যে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার তাতে আর্থিকভাবে অনেকটা দুরাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সকল ধরনের দোকানপাট দীর্ঘদিন পর খোলা হলেও এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কড়াকড়ি নির্দেশনা থাকলেও কেনাকাটা করতে গিয়ে জনসাধারণও তা আর গায়ে মাখছে না!
সরেজমিনে দেখা যায় যে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারের দোকানপাট সকাল থেকেই পসরা সাজিয়ে চলছে রাত অবধি! কেনাকাটায় মানুষের ঢল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি চলছে এসব কেনাকাটা। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি পুরোই উপেক্ষিত! যদিও এক্ষেত্রে নির্দেশনা ছিল বিকাল ৪টা পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে দোকানপাট খোলা রাখার।
অপরদিকে দীর্ঘদিন পর দোকান খোলার সুযোগ পেয়ে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা যেন একাট্টা।
হাজী সুরুজ মার্কেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন ব্যবসায়ী জানান, গত বারুণী মেলা ও শাহ আরেফিন ওরসকে কেন্দ্র করে অনেক মালামাল ঢাকা থেকে আনা হয়েছিল, কিন্তু করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মেলা ও ওরস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান না হওয়াতে পরবর্তীতে সময়েও দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছিল তাতে করে বিপাকে পড়ি আমরা। টাকা ধার করে মালামাল কিনেছিলাম, মালামাল বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করে দিবো, সবমিলিয়ে তা আর হলো না। এখন দেনা করে মালামাল নিয়ে এসে বিক্রি করতে না পেরে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, সংসারের খরচ সবমিলিয়ে দুশ্চিন্তা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা।’
৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে কিন্তু সন্ধ্যার পর পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা হচ্ছে কেন; এমন এক প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী দু’জন বলেন, রমজান মাস, সারাদিন লোকজন বাজারে তেমন আসেনা, সন্ধ্যার পরই কিছু বেচাকেনা করতে পারি।
লোকজন তো জটলা বেঁধে দোকানে ভিড় জমাচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, এক্ষেত্রে সংক্রমিত হবার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে! এমন প্রশ্নের জবাবে, নিউ রয়েল ফ্যাশন ও উজ্জ্বল ফ্যাশনের মালিক বলেন, দীর্ঘদিন পর দোকান খুলেছি, আমরা চাই সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কেনাকাটা করুক কিন্তু লোকজন হুমড়ি খেয়ে ভিড় জমাচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের কথা বললে, পাত্তা দিচ্ছে না অনেকেই। কাস্টমার হিসেবে এর বেশি কিছু বলাও যাচ্ছে না। এ এক উভয় সংকটে পড়েছি!
অনুরূপ পরিস্থিতি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ছোটবড় সব-কটি বাজারেই।
অপরদিকে নির্দেশনা অনুযায়ী বাজারের সেলুনগুলো বন্ধ থাকতে দেখা গিয়েছে। বাদাঘাট বাজারে দীর্ঘদিন সেলুন পেশায় নিয়োজিত দাস বলেন, আমরা সেলুন সমিতির পক্ষ থেকে বলেছি, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কেউ-ই দোকান খুলে কাজ করতে পারবেনা যদি কেউ এ নিয়ম ভঙ্গ করে তবে তাকে আর্থিক জরিমানা করা হবে। তবে এতোদিন যাবত কাজ বন্ধ থাকায় দুঃশ্চিতার ভাঁজ এসব সেলুন ব্যবসায়ীদের কপালে স্পষ্ট বিরাজমান। নির্দেশনা অনুযায়ী সেলুন বন্ধ থাকায় ঘর ভাড়া, সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদার যোগান মেটাতে গিয়ে ভোগান্তির সময়সীমা যেন আরো দ্বিগুণ হলো। এমনই অভিমত ব্যক্ত করলেন, সেলুন পেশায় জড়িত শীতল বাবু।
এদিকে দোকানপাট খোলার সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত, মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধিও। বিষয়টি নিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সেলিম হায়দার বলেন, আমরা বণিক সমিতির পক্ষ থেকে বাজারের ব্যবসায়ীদেরকে বলে দিচ্ছি, যেন ৪টার মধ্যেই দোকানপাট বন্ধ করা হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকেও আমাদেরকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে, কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব নির্দেশনা পুরোই উপেক্ষিত, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি, জটলা বেঁধে দোকান গুলোতে চলছে কেনাবেচা, প্রশাসনিক নজরদারিও চোখে পড়ছেনা, এভাবে চলতে দিলে সংক্রমিত হবার ঝুঁকি কি এড়ানো যাবে? নিজেরাই নিজেদেরকে ঝুঁকিতে পেলে দিচ্ছি না তো!
এমন এক আশংকার কথা জানালে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দোকানগুলোতে লোকজনের জটলার দৃশ্য দুঃখজনক। আমাদের সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। উপজেলার ছোটবড় সবগুলি হাটবাজারে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখার নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।