বিকাল ৫:৫০,   মঙ্গলবার,   ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

তাহিরপুরে ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে তিন লাখ মানুষের সেবা

আবির হাসান-মানিক :
ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ উপজেলায় তিন লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৫ জন। যদিও সরকারি হিসেবে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা।
এর আগে ডাক্তার না থাকলেও ৩০ শয্যা বিশিষ্ট তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বৃদ্ধি করতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু শয্যা বাড়লেও এর রক্ষণাবেক্ষণ আর পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে বাড়েনি সেবার মান। দিন দিন সেবার দেয়ার বদলে নিজেই রোগী হয়ে পড়ছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কখনো ২ জন আবার কখনো ৩ জন চিকিৎসকের উপস্থিতি ছিল। উন্নীত হওয়ার পর ৩৯ তম বিসিএসের ৬ জন চিকিৎসক একসাথে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে ৩ জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যান এবং ৩ জন এখনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নতুন নিয়োগকৃত ৩ জন, পূর্বের ১জন ও ডিজির আদেশক্রমে ১ জনসহ মোট ৫ জন চিকিৎসক বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকলেও তিনি মাসের অধিকাংশ সময় দাপ্তরিক কাজকর্ম, মিটিং, সেমিনার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ৮ টি পদই শূন্য। শূন্য পদগুলো হলো, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১জন, ডেন্টাল ১জন, কনসালট্যান্ট ৪জন (সার্জারি, মেডিসিন, গাইনী, এনেস্থেশিয়া) ও ইউনিয়ন মেডিকেল অফিসার ২ জনের পদ শূন্য রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নানান প্রান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য ছুটে আসা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
এসময় হাসপাতালেই কথা হয় ৩৬তম বিসিএসে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানকৃত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার সুমন চন্দ্র বর্মণের সাথে। তিনি বলেন, গত কিছুদিন পূর্বে ৬ জন ডাক্তার একসাথে যোগদান করেছিলেন। ৩ জন চিকিৎসক তদবির করে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন। আর আমরা যারা আছি সবাই চেষ্টা করছি সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা দিতে।
তিনি আরও জানান, ১৩ জন চিকিৎসকের স্থলে আমরা ৫ জন চিকিৎসা দিচ্ছি, সেজন্য চাপটা একটু বেশি। তবু আমরা চেষ্টা করছি সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছেন ইয়াসমিন আক্তার (২৭)। তিনি বলেন, হাসপাতালে মহিলা ডাক্তার থাকায় আমরা সহজেই সমস্যার কথা বলতে পারছি। তবে প্রতিটি হাসপাতালে একজন মহিলা ডাক্তার থাকা খুবই জরুরিও বলেও মনে করেন তিনি।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন জানান, কিছুদিন পূর্বেও অনেক চিকিৎসক ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ৩ জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকরা।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইকবাল হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার থাকাতে চান না। নতুন নিয়োগ দিলেও তারা যোগদানের দিন থেকে অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা যারা এখানে আছি প্রত্যেকেই চেষ্টা করছি আমাদের সেবাটুকু দেয়ার।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন মো. শামস উদ্দিন বলেন, ৬ জন চিকিৎসক যোগদান করে ৩ জন কি কারণে অনত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন তা আমার জানা নেই। তবে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য শীঘ্রই চিঠি লিখব।