দুপুর ১:১০,   শনিবার,   ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মপাশায় ধান সংগ্রহে আ.লীগ নেতার সিন্ডিকেট, বঞ্চিত কৃষকরা

ধর্মপাশা প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দীলিপ মজুমদার তার লোকজন নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্থানীয় খাদ্যগুদামে ন্যায্যমূল্যে ধান সরবরাহ করছেন। এতে করে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, দীলিপ মজুমদার তার ছোট ভাই সম্রাট মজুমদারকে দিয়ে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগসাজশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কম মূল্যে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড নিয়ে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করছেন।
এ অভিযোগ শুনে আজ রোববার (৫ জুলাই) স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী সরেজমিনে খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে গেলে দীলিপ মজুমদার সেখানে উপস্থিত হয়ে সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ধর্মপাশা খাদ্যগুদামে এবার চলতি বোরো মৌসুমে মণপ্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা দরে ২ হাজার ৫শ ৯ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। তবে বাইরে ধানের ন্যায্যমূল্য থাকায় এলাকার কৃষকদের মাঝে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাদ্দকৃত ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
রোববার সকালে ধর্মপাশা খাদ্যগুদামের সামনে নদীর ঘাট থেকে ধান বোঝাই একটি ভলগেট নৌকা থেকে কৃষক ছাড়া ধান খাদ্যগুদামে উঠানো শুরু হলে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টি দেখতে উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক এম এম এ রেজা পহেলসহ স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী খাদ্যগুদামে যান। এ সময় সম্রাট মজুমদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, প্রায় ১ হাজার ৪শ মণ ধান সুনামগঞ্জের শাল্লা থেকে খাদ্যগুদামে বিক্রির জন্য তিনি নিয়ে এসেছেন। এ সময় সংবাদকর্মীরা কৃষক ছাড়া ধান দেওয়ার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে সম্রাট মজুমদার ক্ষেপে গিয়ে তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দীলিপ মজুমদারকে ফোন করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দীলিপ মজুমদার খাদ্যগুদামে উপস্থিত হয়ে সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হন। এ সময় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। ঘটনাস্থলে দীলিপ মজুমদার সংবাদকর্মীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘মাইর করলে লাঠি নিয়া আয়। সাংবাদিকের কার্ড আমি বানাইতে পারি। ধান দিলে দেখি কে ফিরায়?’
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এম এ রেজা পহেল বলেন, ‘সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সরবরাহ প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করছে। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতার এমন অশোভন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ধর্মপাশা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি এর সঙ্গে জড়িত নই। কৃষকদের সাথে নিয়েই উনি (সম্রাট) ধান দিচ্ছেন।’
অভিযোগ পেয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, ‘এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’