রাত ৩:২৯,   মঙ্গলবার,   ২৩শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ৭ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

নানা সমস্যায় জর্জরিত ইনাতনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়


নোহান আরেফিন নেওয়াজ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ :
জরাজীর্ণ ভবন, শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষকের স্বল্পতা, অচল শৌচাগার, নলকূপ না থাকায় পানিসংকটের মত গুরুতর সমস্যায় জর্জরিত দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ইনাতনগর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিনেও সমস্যার সমাধানে কোনোরকম সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ না থাকায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী কমতে শুরু করেছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ইনাতনগর গ্রামে ২০০১ সালে বেসরকারী সংস্থা এফআইভিডিবির সহযোগীতায় দু’কক্ষ বিশিষ্ট টিনসেডের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে গ্রামবাসীর দানকৃত জায়গায় মাটিভরাট করে একটি অফিসরুমসহ চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা স্থায়ী ভবন নির্মাণ করে এফআইভিডিবি। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় এফআইভিডিবির অর্থায়নে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসলে ও ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের অর্থায়ন ইস্তফা দেয় এফআইভিডিবি। ফলে থমকে যায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা।
প্রায় ৪ হাজার জনসংখ্যার গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়টি যেনো ওই গ্রামের বাতিঘর। পরবর্তীতে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে শ্রেণি কার্যক্রম পুনরায় চালু করেন। ৬ বছর চালু থাকার পর ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ এক্সটেনশন এডুকেশন সার্ভিসেস (বিজ) এর সহায়তায় শ্রেণি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয় বিদ্যালয়টিতে। তবে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত হয় বিদ্যালয়টি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের ছোট একটি কক্ষ অফিসঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে একটা টেবিল নিয়ে প্রধান শিক্ষক বসেন। বাকি তিনটি রুমে ও একটি ছোট্ট টেবিল নিয়ে বসে আছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তবে পর্যাপ্ত বেঞ্চের অভাবে দুজনের একটি বেঞ্চে গাদাগাদি করে ৪-৫ জন করে বসতে দেখা গেছে। বিদ্যালয়ের একমাত্র শৌচাগারটি সংস্কারের অভাবে অচল হয়ে পড়ে আছে। জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আশপাশের বাড়িতে যেতে হয়। এতে অনেকে অস্বস্তি বোধ করে। এভাবে চলতে থাকায় অনেক অভিভাবক তাঁদের ছেলেমেয়েদের আর বিদ্যালয়ে আসতেও দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
এছাড়া ও প্রতি বর্ষায় বিদ্যালয়ের উঠান সহ চারপাশের মাটি খাল ও নদীতে নেমে পড়ে। এতে বিদ্যালয়ের উঠান প্রায় তিন ফুট নিচু হয়ে যেতে দেখা গেছে। ফলে বিদ্যালয়ের বারান্দার নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে মেঝে ভেঙ্গে গেছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এমন বাস্তবতায় বিদ্যালয় টিকিয়ে রাখতে গার্ডওয়াল নির্মাণ করে মাটি ভরাটের দাবী স্থানীয়দের।
এছাড়াও অবকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকটও প্রকট। বর্তমানে তিনজন শিক্ষক আছেন। একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। অন্য দুজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে ছয়টি শ্রেণির ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ান। এতে লেখাপড়ার মান পড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। গত ৫ বছর পূর্বে ও এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৮০-২০০ এর মধ্যে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলী আহমদ বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চোখে পড়ার মত সরকারি কোনো অনুদান পায়নি। এমনকি বিদ্যালয়টির উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে এই এলাকার একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তার গৌরব হারাচ্ছে। তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের অবকাঠামগত উন্নয়নসহ শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান।
এ ব্যাপারে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন, আমি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বহুমুখী সমস্যা দেখতে পেয়েছি। শীঘ্রই পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের বরাদ্দ থেকে স্যানিটেশন ও টিউবওয়েল স্থাপনের মাধ্যমে পানি ও স্যানিটেশন সমস্যার সমাধান করবো। বাকি সব সমস্যাগুলো ও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে দ্রুত সমাধান করা হবে।