সকাল ৮:২৬,   শনিবার,   ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ফুটছে লাল শাপলা, নেই সৌন্দর্যের মায়াজাল

আবির হাসান-মানিক :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। হাওর-বাওর আর সীমান্তবর্তী এ উপজেলার কাশতাল এলাকার বিকি বিলে শাপলা ফুল ফুটতে শুরু করেছে। বর্ষা শেষের এই সময়ে বিলজুড়ে ফুটছে লাল শাপলা। তবে ভোরে ফুল ফোটার সাথে সাথেই লাল শাপলা তুলে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। এতে লাল শাপলার মায়াজাল তৈরি হচ্ছে না। হচ্ছে না লাল ফুলেল বিছানাও। নয়ন জুড়ানোর পরিবর্তে লাল শাপলার এলোমেলো অবস্থা কষ্ট দিচ্ছে পর্যটকদের।
অথচ গত বছরও বিকি বিলের লাল শাপলা পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। করেছে মুগ্ধও। পাহাড়ের কাছে অবস্থিত বিকি বিলের লাল শাপলার প্রেমে পড়েছিলেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। বিশাল, বিস্তৃত এলাকার বিকি বিলের লাল শাপলার মায়াজালে মোহিত হয়েছিলেন সবাই। এজন্য গত বছরে ২১ অক্টোবর সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ ‘পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য নতুন এলাকা’ হিসেবে বিকি বিলে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন।তবে এক বছর পরই সৌন্দর্য হারালো লাল শাপলা। স্থানীয়রা গরু, মহিষের গো-খাদ্য হিসেবে বিল থেকে লাল শাপলা তুলে নিচ্ছেন। এতে জমির মালিক কিংবা প্রশাসন কেউই বাঁধা দিচ্ছে না। আর বাঁধা না পেয়েই প্রতিদিন লাল শাপলা তুলে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। এতে লাল শাপলা হারাচ্ছে সৌন্দর্য। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। মুখ থুবড়ে পড়ছে সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন স্পট।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কাশতাল এলাকায় অবস্থিত লাল শাপলার বিকি বিলটি হলহলিয়ার চক ও দিঘলবাঁক মৌজার প্রায় ১৪.৯৫ একর জায়গা নিয়ে গঠিত। গত এক যুগ ধরে এ বিলে সামান্য ফুল ফুটতো কিন্তু ২-৩ বছর ধরে পুরো হাওরে লাল শাপলা ফুটে প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে। কিন্তু এ বছর বিকি বিলের এমন সৌন্দর্য নেই বললেই চলে। সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যায় বিলের সৌন্দর্যের উপর প্রভাব পড়েছে। আর বর্তমানে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের লোকজন অবাধে শাপলার ডাটা উপড়ে গরু মহিষের খাদ্যের জন্য নিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করছেন।সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাস থেকেই পার্শ্ববর্তী বোরখাড়া, আমবাড়ি, কাশতাল গ্রামের কিছু কৃষকেরা গরু, মহিষের খাবার হিসেবে লাল শাপলার ডাটা কোন বাঁধা ছাড়াই নিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নৌকা বোঝাই করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নৌকা বোঝাই করে লাল শাপলার ডাটা গবাদিপশুর খাবারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসময় জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক এ প্রতিবেদককে জানান, এ অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের গরু, মহিষকে খড়ের পরিবর্তে বিলের এ শাপলার ডাটা উপড়ে নিয়ে খাওয়াচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, বিলে গত বছর যে পরিমাণ শাপলা ফুটতো, এ বছর তা আর দেখা মিলছে না। গরু আর মহিষের খাবারের জন্য অবাধে শাপলার ডাটা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আমবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ কৃষকলীগ বড়দল উত্তর ইউনিয়ন শাখার আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, অবাধে লোকজন শাপলার ডাটা নৌকা লোড করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাঁধা দিলেও কেউ শুনছে না। বিলের যে সৌন্দর্য ছিল, সে পরিবেশটা নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে বড়দল উত্তর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. মাসুক মিয়া জানান, দৃষ্টিনন্দন লাল শাপলার বিকি বিল থেকে শাপলার ডাটা যে যার মতো করে নিয়ে গরু মহিষকে খাওয়াচ্ছে। কেই বাঁধা দিলে স্থানীয় লোকজনের সাথে এ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের কিছু লোকজনদের এমন কর্মকাণ্ডে এ বিলের সৌন্দর্য যে নষ্ট হচ্ছে তাও বলে বুঝানো যাচ্ছে না।
আর বড়দল উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত দৃষ্টিনন্দন এ পর্যটন স্পটটি কিছু মানুষের খামখেয়ালির কারণে হুমকিতে পড়েছে। একে রক্ষার জন্য আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
এ নিয়ে বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম জানান, কয়েক দফা বন্যায় বিলের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়েছে। আর যা কিছু অবশিষ্ট রয়েছে তা বর্তমানে কৌশল করেই বিলের এ শাপলার ডাটা উপড়ে ফেলা হচ্ছে। যা অনেকেই গরু মহিষের খাবার হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে। এর সৌন্দর্য রক্ষা করে দেশ-বিদেশে এ বিলকে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় যেন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
আর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ সিলেট ভয়েসকে জানান, গরু মহিষের খাবারের যোগান হিসেবে বিকি বিলের লাল শাপলার ডাটা উপড়ে এর সৌন্দর্য বিনষ্ট করা হচ্ছে বলে জানতাম না। এই প্রথম আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। দৃষ্টিনন্দন এ পর্যটন স্পটটির সৌন্দর্য রক্ষায় খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।