সুনামগঞ্জে ১৪ শিশু অপরাধী পেল সংশোধনের সুযোগ
স্টাফ রিপোর্টার :
সুনামগঞ্জে শিশু অপরাধের ১০ মামলার রায়ে ১৪ শিশু অপরাধীকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ রায় দেন।
১০ মামলায় ১৪ জন শিশু অপরাধীকে সংশোধনের জন্য বন্ডের মাধ্যমে তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেন তিনি। এসব শিশুকে আটটি শর্ত মেনে চলতে হবে। আর তাদের সব কাজ তদারকি করবেন সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান।
আসামিদের মধ্যে আহমেদ সালেহ তায়্যিবের বিরুদ্ধে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে টাকা নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়। একজনের ছবির সঙ্গে নিজেদের ছবি জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে ছাড়া ও মানহানির অভিযোগে মামলা হয় আবু সাইদ, মিজানুর রহমান, রাব্বুল মিয়া ও জুনায়েদ আলমের বিরুদ্ধে। মুন মিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশকে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ধরতে বাধা দেওয়া ও আসামির পলায়নে সহায়তা করার অভিযোগে মামলা হয়।
রুহুল আমিনেকে শ্লীলতাহানির অপরাধে অভিযুক্ত করে মামলা হয়। আব্দুল হান্নান, আলী আকবর, মো. মন্তাজ আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয় মারধর করে জখম করার অভিযোগে।
মো. তারেক ও রতন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মাদক রাখার অভিযোগে মামলা হয়। ফয়জুল ইসলামের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার অভিযোগে এবং দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে মারধর করে সাধরণ জখম করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়।
প্রবেশনে থাকাকালে যে শর্তগুলো এসব শিশুকে মেনে চলতে হবে:
১. বাবা-মায়ের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
২. বাবা-মায়ের সেবা করতে হবে।
৩. প্রতিদিন যার যার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
৪. নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে হবে।
৫. প্রত্যেককে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগাতে হবে ও পরিচর্যা করতে হবে।
৬. অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
৭. মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।
৮. ভবিষ্যতে কোনো অপরাধে নিজেকে না জড়ানো যাবে না।
শর্তগুলো মানতে ব্যর্থ হলে প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমানের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আবার আটক করে তাদের টঙ্গী শিশু (কিশোর) উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
রায় দেওয়ার সময় আদালত বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। শিশু অপরাধের দায়ে এক সঙ্গে ১০টি মামলায় এ রকম রায় আগে দেওয়া হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। আমরা সবাই চাই, শিশুরা ভালো হোক৷ তাই তাদের সুযোগ দিতে চাই। আমাদের কিশোর সংশোধনাগারের অবস্থা তেমন ভালো না। তাই সব কিছু বিবেচনা করে তাদের মা-বাবার কাছে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ভালো হতে পারে।
সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান বলেন, আমি এসব শিশুকে পর্যবেক্ষণ করব। তারা আদালতের সব শর্ত মেনে চলছে কিনা দেখব। যদি তারা শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আদালতের মাধ্যমে তাদের টঙ্গী শিশু (কিশোর) উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট নান্টু রায়। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রুহুল আমিনসহ কয়েকজন আইনজীবী।