সকাল ১১:৩৯,   শনিবার,   ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

খাতাকলমে ধান কাটার পরিসংখ্যান বাড়িয়ে তথ্য গোপন করা হচ্ছে-হাওর বাঁচাও আন্দোলন


স্টাফ রিপোর্টার:
পর পর হাওর ডুবির ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওর নিয়ে কাজা করা সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন।

মঙ্গলবার ( ২৬ এপ্রিল) দুপুরে দৈনিক সুনামকণ্ঠ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ২ এপ্রিল থেকে শুরু করে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাঁধ ভেঙ্গে ও পানি উপচে জেলার ছোট বড় ৩১টি হাওর তলিয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।

বেশিরভাগ হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেলেও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য তুলে না ধরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িতদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কাজ করছে বলে অভিযোগ হয় সংবাদ সম্মেলনে।

হাওরে এখনো অর্ধেক ধান কাঁচা অবস্থায় থাকলেও কৃষি বিভাগ খাতাকলমে ধান কাটার পরিসংখ্যান বাড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করছে বলে অভিযোগ করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সুকেন্দু সেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল।

সংবাদ সম্মলেন লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার ২৪ নং পিআসির নজরখালির বাঁধ ভেঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরের ১২০০ হেক্টর কাঁচা ধান তলিয়ে যায়। ৪ এপ্রিল ছাতক উপজেলার গোয়া-পান্ডুয়া,নাগা উন্দা,পুটিয়া ও জল্লার হাওরের ৭১ হেক্টর, একইদিন শাল্লা উপজেলায় বাঁধ উপচে বাঘার হাওরের ৪২৫ হেক্টর এবং পরদিন ৫ এপ্রিল নদীর পানি উপচে কৈয়ারবনন্দ ও পুটিয়ার হাওরের ৪০ হেক্টর, একই দিন জেলার ধর্মপাশা উপজেলার ৭৫,৭৬,৯২,৯৩ পিআইসির চন্দ্রসোনার থালা উপ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে চন্দ্র সোনার থালা হাওরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর, একইদিন ৫৪ নং পিআইসির সোনামরল হাওর উপ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে যায়। ৬ এপ্রলি নদীর পানি উপচে শাল্লা উপজেলার গোব্বরহরি হাওরের ৪০ হেক্টর, একইদিন দিরাই উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত হাওর চাপতির হাওরে উপ প্রকল্পের ১৬ নং পিআইসির বৈশাখির বাঁধ ভেঙ্গে চাপতির হাওরের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়।

এতে দিরাই উপজেলার তাড়ল, জগদল, করিমপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ওইদিন দিরাই উপরেজলার টাংনির হাওরের জারালিয়া খেয়াঘাটের বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবশে করে প্রায় হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি মুখে পড়ে।
পরবর্তিতে কৃষকরা বাঁধটি মেরামত করেন। ৮ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার ফল্লিয়ারদাইড় আফার দিয়ে পানি প্রবেশ করে এরালিয়া হাওরের ১৬০০ হেক্টর এবং ওইদিন মধ্যনগর উপজেলার পাওধোয়া বাঁধ ভেঙ্গে মুক্তারখলা হাওরের ৯৬৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। ১৭ এপ্রিল গুরমার বর্ধিত অংশ উপপ্রকল্পের ২৭নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গে গুরমার হাওরের ২ হাজার হেক্টর এবং একইদিন দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা উপ-প্রকল্প ৪২ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গে হুরামন্দির বাঁধ ভেঙ্গে ১২০০ হেক্টর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইডরা বিল, পুরাইডরা, নউল্লা, বইশমারা, বারকুল, সিলাইন, ডাবরবিল, মরা ডাবরের ৪৮৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এছাড়াও ওইদিন নদীর পানি উপচে জগন্নাথপুর উপজেলার গলাকাটা হাওর ও শেওরারবন হাওর ৩২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়েগেছে। ২০ এপ্রিল মধ্যনগরের ইন্দরপুর বাঙ্গালভিটার বাঁধ ভেঙ্গে রাঙ্গামাটির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর হাপাতির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর আহমদাবাঁধ হুন্দাবিললের ৭৫ হেক্টর, ২১ এপ্রিল কোন্দানাল ব্রিজের পুটিয়ার হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ছাতক ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৫০০ হেক্টর, ২৪ এপ্রিল শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের ৮১ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গ প্রায় ২০০০ হাজার ধান তুলিয়ে যায়। সর্বশেষ ২৬ এপ্রিল জামালগঞ্জ উপজেলার আছানপুর ১৭ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।