রাত ১১:৪৮,   শুক্রবার,   ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জলে যাচ্ছে সরকারি কোটি কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি
গত ৫ মাস আগে সুনামগঞ্জে ৩ দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে জেলার সাথে বিভিন্ন উপজেলার। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সুনামগঞ্জের ২০ লাখেরও বেশি মানুষ।
তবে বন্যা পরিস্থিতি ৫ মাস যাবৎ স্বাভাবিক হলেও নতুন আরেক দূর্ভোগে পড়েছেন সুনামগঞ্জবাসী। পানি কমে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। আর এতে নদী গর্ভে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি সহ বিভিন্ন হাট বাজার।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর গ্রাম। গ্রামটিতে বসবাস ৫ শতাধিক পরিবারের। কিন্তু বছরে বছরে বন্যা পরবর্তী সময়ে গ্রামটিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙন।


ইতিমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তার মধ্যে একজন দিনমজুর ইসমাইল মিয়া। মহাজনের কাছ থেকে ছড়া সুদে ৪ লাখ টাকা এনে ১৪ শতাংশ জায়গার মধ্যে নির্মাণ করেছিলেন শখের একটি বাড়ি।
কিন্তু সেই শখের করা বাড়িটিতে বেশি দিন থাকা হয়নি ইসমাইলের। বাড়ি বানানোর ৪ বছরের মাথায় নাইন্দা নদীর গ্রাসে তার শখের বাড়িটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তাই প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে বুকভরা কষ্ট নিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকেন ইসমাইল।
ইসমাইল মিয়া নিউজসুনামগঞ্জডটকমকে বলেন, নদীতে আমার শখের বাড়িটি তলিয়ে গেছে। এখন আমার মাথা গুজার ঠাঁই হয়েছে অন্যের বাড়িতে।

শুধু নাইন্দা নদী নয়, জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, নলজুর, বটেরখাল, মহাশিং ও পুরাতন সুরমা নদীর বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি কমার সাথে সাথে ভাঙছে নদীর পাড়। এমনকি
জেলার ১২ উপজেলার ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার,গ্রামীণ জনপদ, মসজিদ ও কবরস্থান এর মধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে যত সময় যাচ্ছে ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ভাটির জেলার নদী ভাঙন।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সুনামগঞ্জে সবচেয়ে ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছিল দোয়ারাবাজার। যার ফলে ২০২০ সালে অক্টোবরে এই উপজেলার নদী ভাঙন থেকে ঘরবাড়ি সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর বাঁচাতে নদী ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে ১৯১কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত জেলার ১২ উপজেলায় যে স্থান গুলোতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানেই অস্থায়ী ভাবে কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন পর্যন্ত (২০২০-২২) অস্থায়ী ভাবে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার নদী ভাঙন রোধে কাজ হয়েছে। তবে সেই কাজ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এছাড়াও প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি ভাঙতে থাকায় আতংকে আর উৎকন্ঠায় সময় পার করছেন ভাঙন এলাকার মানুষরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার নিউজসুনামগঞ্জডটকে বলেন, স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন ঠেকাতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদীর গুলো যে স্থানে প্রতিবছর ভাঙন শুরু হয় সেগুলোর তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।

তবে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কার্যালয়ে গিয়ে কতগুলো ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে কিংবা জেলায় নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো কতটি পরিবারকে পূর্ণবাসন করা হয়েছে তার তালিকা চাইলে ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকতা অনেকটা দায়সারা ভাবে শুধু ২০২০ সালের তালিকাটা উনার কাছে আছে বলে জানান।
সেই তালিকায় দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর, ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই ও জামালগঞ্জ সহ ৫ উপজেলার নদী ভাঙনে দিশেহারা ২৪০ টি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম নিউজসুনামগঞ্জডটকমকে জানান, প্রতিবছর নদীতে ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে কিন্তু তার কোন হালনাগাদ তথ্য নেই। যারা ২০২০ সালে ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের পূর্ণবাসনের জন্য একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হচ্ছে।
২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ঘরবাড়ি সহ নানা প্রাচীন হাট-বাজার নদীতে বিলীন হয়ে যায়।