সকাল ৬:৩২,   বৃহস্পতিবার,   ৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

তাহিরপুরে বিজিবি ও স্থানীয়দের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান


আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর :
তাহিরপুর সীমান্ত এলাকায় হযরত মুহাম্মদ (স.) কে ‘কটুক্তি’ বিষয়ে স্থানীয় মুসল্লি ও ট্যাকেরঘাট বিজিবি কোম্পানী কমান্ডারের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ট্যাকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্প প্রাঙ্গণে দুই পক্ষের লোকজনের আলোচনার মধ্যে দিয়ে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। আলোচনা সভায় হযরত মুহাম্মদ (স.) কে ট্যাকেরঘাট বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার কর্তৃক গালি ও কটুক্তির বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় স্থানীয় মুসল্লিদের পক্ষ থেকে মাও. এম কে আনোয়ার ও মাও. আদিল হাসান ভুল স্বীকার করে এবং ভবিষ্যতে কোন কিছু সঠিকভাবে না জেনে গুজব ছড়াবেন না বলে অঙ্গীকার করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সুনামগঞ্জ-২৮বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাকসুদুল আলম, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসিল্যান্ড সৈয়দ আমজদ হোসেন, তাহিরপুর থানার ওসি মো. লতিফুর রহমান তরফদার, ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন খন্দকার লিটন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন খান, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খসরুল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর, বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, ট্যাকেরঘাট কম্পানী কমান্ডার আমিনুল ইসলাম, সাংবাদিক এম.এ রাজ্জাক, মাওলানা আদিল হাসান, মাওলানা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকালে ভারতীয় এক হিন্দু তরুণী প্রেমের টানে বাংলাদেশের বড়ছড়া গ্রামের আলী খানের ছেলে সেজু খানের সঙ্গে চলে এসে আত্মগোপনে চলে যায়। বিষয়টি ভারতীয় বিএসএফ জানতে পেরে তরুণীকে ফেরত নিতে বাংলাদেশের বিজিবির কাছে চিঠি লিখে। বিজিবি চিঠি পেয়ে সীমান্তবর্তী বড়ছড়া গ্রামের আলী খানের কাছে গিয়ে তার ছেলের সন্ধান চায়। আলী খান তার ছেলের সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে বিজিবি আলী খানের বাড়ি থেকে চলে আসে এবং বলেন যে, ছেলেকে দ্রুত খোঁজে বের করে দিতে। সোমবার সন্ধ্যায় আলী খান তার ছেলেকে না নিয়ে ট্যাকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পে আসলে বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার আলী খানকে ধমক দেন। এতে আলী খান বাড়িতে ফিরে আসেন।
ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে ঘুরাতে একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র ট্যাকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার আমিনুল ইসলাম হযরত মুহাম্মদ (স.) কে গালী এবং কটুক্তি করেছেন বলে ছড়িয়ে দেয়।
বিষয়টি স্থানীয় মুসল্লিদের কানে পৌছলে তারা বিষয়টি যাচায় বাচাই না করেই বড়ছড়া জামে মসজিদের ইমাম মাও. আদিল হাসান এবং মাও. এমকে রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক মুসল্লি এবং গ্রামবাসী বড়ছড়া বাজারে কোম্পানী কমান্ডারের বিচার দাবী করে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে তা ছড়িয়ে দেন।
সোমবার রাতে নবীকে(স.) গালী দেয়ার কথা শুনে স্থানীয় মুসল্লি ও বিজিবির মধ্যে মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে বিষয়টি সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের কানে পৌছলে তিনি দ্রুত স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ট্যাকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্প প্রাঙ্গণে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় হযরত মুহাম্মদ (স.) কে গালী দেয়ার বিষয়াট প্রমাণিত না হওয়ায় স্থানীয় মুসল্লিরা বিজিবির কাছে ভুল স্বীকার করেন।
ট্যাকেরঘাট জামে মসজিদের মুয়াজ্জিম এম কে রফিকুল ইসলাম বলেন, নবীকে (স.) গালী দেয়ার বিষয়টি আমরা নিজ কানে শুনিনি। লোক মুখে শুনে আমরা বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও ফেসবুকে পোষ্ট করেছিলাম। যা ঠিক হয়নি। বিষয়টি গুজব ছিল, যা পরে বুঝতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমরা উলামায়ে কেরাম ও মুসলিম জনতা সঠিক তথ্য না জেনেই আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেন।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্দু চৌধুরী বাবুল ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে জামায়াতের একটি চক্র ছেয়েছিল স্থানীয় মুসল্লি ও বিজিবির মধ্যে বড় ধরণের একটি সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে। কিন্তু নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকায় তারা তা করতে ব্যর্থ। এই ষড়যন্ত্রের পিছনে যারা কাজ করছে, তা খোঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাকসুদুল আলম বলেন, ট্যাকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার হযরত মুহাম্মদ (স.) কে গালী ও কটুক্তির বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। একটি চোরাচালানী সংঘবদ্ধ চক্র ছেয়েছিল গোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। কিন্তু তারা তা পারেনি, ভবিষ্যতে পারবে না।
তিনি বলেন, যাকে নিয়ে ঘটনা তিনি উপস্থিত সকলের সামনে বলেছেন, বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার নবীকে (স.) গালি দেননি। স্থানীয় মুসল্লিরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারায় দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।