বাঁধের চিন্তা বাদ দিয়ে হাওরে ধান কাটায় ব্যাস্ত কৃষক
স্টাফ রিপোর্টার:
নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না করা আর অসয়ে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে কৃষকের যেন রাতের ঘুম হারাম। কখন কি হয় বুঝা বড় দায়, নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও যা ক্ষতি হওয়ার সেটি হয়েই গিয়েছে। ঢলের পানির আসার পর নিজের স্বপ্নে ফসলকে বাঁচাতে বাঁধ রক্ষায় বিনাশ্রমে কাজ করে গিয়েছিলেন তারা, তবে নিয়তির ডাক মেনে নিয়ে এখন বাঁধ ভুলে হাওরের ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
কারণ এখন আর বাঁধের চিন্তা করে লাভ হবে না বুঝে গেছেন কৃষকরা। জেলায় এ বছরে প্রায় শতাধিকের উপরে হাওরে বোর ধান চাষ করেন কৃষকরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ টি হাওরের ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ধান পাকার অপেক্ষা করলে যদি আরও হাওর তলিয়ে যায় সে জন্য অজনা আতংকে কাঁচা ও সামান্য পাকা ধান কেটে ফেলছেন কৃষকরা। এদিকে অনেক হাওরে পানি চুয়ে ঢুকছে এবং বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির হওয়ায় পানির মধ্যেই ধান কাটছেন কৃষকরা।
জেলার সবকটি ফসল রক্ষা বাধঁ ঝুকির মধ্যে রয়েছে। তাই কোন সময় কোন বাঁধ ভাঙে সেটি বলা মুলকিল তাই কৃষকতের বেশি বেশি করে ধান কাটতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কৃষকদেরকে উৎসাহি করা হচ্ছে ৮০ শতাংশ ধান পাকলেই দ্রুত কেটে ফেলার জন্য।
জেলার শাল্লা তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর এবং উপজেলার হাওর গুলোর খোঁজ নিয়ে জানা যায় হাওর ঘুরে হাওরে হাজার কৃষক ধান কাটছেন। ধানকেটে শুকনো জায়গায় ধান রাখা, শুকানো ও বিশ্রামের জন্য নির্মিত খলায় নিয়ে এসেছেন স্ত্রী সন্তানদের। সরকারের দেয়া হারভেস্টারযন্ত্রে এবং হাতে কাস্তে নিয়ে ধান কাটছেন সমানে। সেই ধান সামলাচ্ছেন নারী কিষানীরা।
শাল্লা উপজেলায় ছায়ার হাওরের কৃষক লিলু দাশ বলেন, ধান সৃষ্টিকর্তায় আর্শিবাদে ভাল হয়েছে কিন্তু বাঁধের অবস্থা খুব বেশি ভালা না আর নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাওর গুলোতেও পানি জমে যাচ্ছে। এ জন্য ধান কেটে ফেলছি। বাঁধ বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করছি আমরা কিন্তু যেখানও বাঁধ দরকার সেখানে বাঁধ না দিয়া অন্য জায়গায় বাঁধ দিলে তো ফসল হানি ঘটবেই।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে কৃষক ফিরোজ মিয়া বলেন, বাঁধ রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু পারি নাই। এখন সব ধান পানি নিচে চলে যাচ্ছে। এ জন্য এখন আর বাঁধ ঠিকবো করি ভাবিনা, যা ধান পাইমু তাই দিয়াই কোনমতে চলে বাঁচতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও জেলা বাঁধ রক্ষা ব্যবস্থাপনা ও তদারকি কমিটির সদস্য মো. জাকির হোসেন জানান, আমরা গত বিশ দিন ধরে বাধগুলোতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কর্মকর্তাবৃন্দ রাতদিন স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করেছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু হঠাৎ অস্বাভাবিক পানির চাপ বাধগুলো নিতে পারছেনা। তাই বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভাঙছে। এখন বাধে কাজ করবো এমন লোকও পাচ্ছিনা। তাই এলাকার মানুষ ফসলের মায়ায় বাধ রেখে এখন হাওরে নেমেছেন। তারা ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন। আমরা একই সঙ্গে বাঁধ রক্ষা ও ধান কাটার কাজ তদারকি করছি।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা জানান, আজ (মঙ্গলবার) থেকে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, তাই এখন বৃষ্টিপাত কম হওয়ার সম্ভাবনাও আছে তাই আমাদের দ্রুত ধান কেটে ফেলতে হবে যদি আরও অপেক্ষা করা হয় তাহলে উজানের বৃষ্টিতে সব চলে যাবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমরা মাইকিং করিয়ে বলিছ এবং উৎসাহিত করছি যাদের হাওরে ধান ৮০ ভাগ পেকে গেছে তারা যেনো ধান কেটে ফেলেন।