রাত ৯:১৬,   বুধবার,   ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১০ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের নির্বাচন:‘মোদি ব্যর্থ, জিত ছেন মমতাই’

নিউজসুনামগঞ্জ ডেস্ক:
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে মোট আসন ২৯৪টি। সমশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে দুটি আসন করোনা আক্রান্ত হয়ে দুই প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই দুই আসনে ভোট হবে ১৬ মে। যে দল বা জোট ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১৪৮টি আসন পাবে সরকার গঠন করবে তারাই। আর এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর দৌড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসকেই এগিয়ে রাখছে বুথফেরত জরিপগুলো।
তীব্র উত্তেজনার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনের আট দফার ভোট গ্রহণ শেষ। এবার ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার পালা। তবে বুথফেরত জরিপগুলোর জোরালো আভাস, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তীব্র উত্তাপ ছড়ানো এই নির্বাচনে জয় পেতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসই।
আট দফায় ৩৪ দিনের জমজমাট ভোট যুদ্ধ শেষে রোববার সকাল ৮ থেকে শুরু হবে ভোট গণনা, এদিনই জানা যাবে ফলাফল। করোনার কারণে এবার ভোট গণনা বুথ কম রাখায় ফলাফল ঘোষণা কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।
ভোট গণনা শুরুর আগেই প্রকাশিত হয়েছে বুথফেরত জরিপগুলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পূর্বাভাস- তৃতীয়বারের মতো নবান্নে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস। বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটি অনায়াসে পেয়েই যাবে সরকার গঠনের ‘ম্যাজিক ফিগার’।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে মোট আসন ২৯৪টি। সমশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে দুটি আসন করোনা আক্রান্ত হয়ে দুই প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই দুই আসনে ভোট ১৬ মে। যে দল বা জোট ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১৪৮টি আসন পাবে সরকার গঠন করবে তারাই।
বাংলাভাষী রাজ্যটিতে জিততে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি সর্বভারতীয় ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। নির্বাচন উপলক্ষে করোনার মধ্যেও কয়েক দফা রাজ্যটি সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের তীর্থস্থানে মোদির পূজা। তার এই সফর পশ্চিমবঙ্গের ভোট ঘিরেই ছিল বলে অনেকের মত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মোদির বাংলাদেশে সফরের নেপথ্যেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতিই উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করেন অনেকে। ওই সফরে মোদি গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি সফরে যান। সেখানে ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থানে পূজা দেন তিনি। এ অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘মতুয়া’ নামে একটি হিন্দু সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গে বড় ভোট ব্যাংক, যারা তৃণমূলে ভোট দিয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, সেই ভোট বিজেপির ঘরে নিয়ে আসাই লক্ষ্য ছিল মোদির।
আট ধাপের প্রতিটি ধাপের ভোট ঘিরেই কম-বেশি সহিংসতা ছড়িয়েছে। বোমা, গুলির ঘটনা ঘটেছে। হতাহত হয়েছেন অনেকে। এসবের দায় বিজেপি-তৃণমূল একে-অপরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে। এবার পশ্চিমবঙ্গের ভোট শুরু থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে এসব সহিংসতার কেন্দ্রে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। একে-অপরকে নিয়ে কটাক্ষমূলক ও উত্তেজক বক্তব্য দিয়েছেন তারা। আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য প্রচারণায় ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধও হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন গোটা ভারতের অবস্থা নাকাল হলেও নির্বাচন উপলক্ষে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকদের মধ্যে। করোনার বিস্তারের মধ্যেও বিশাল আয়োজনে মিছিল, সমাবেশ করেছে বিজেপি, তৃণমূলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো।
কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল কংগ্রেস। করোনার মধ্যে ভোট ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসেননি রাহুল গান্ধী ও পিয়াংকা গান্ধীসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের অষ্টম ও শেষ দফার ভোট হয়েছে। এদিন ভোট হয় চার জেলায় ৩৫টি আসনে। শেষ ধাপেও বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ভোট শেষ হতেই প্রকাশ করা হয় বুথফেরত জরিপগুলোর ফল। বেশির ভাগ জরিপেই তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
করোনা মহামারির মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ভোটে আমেজ ছিল চোখে পড়ার মতো এপিবি-আনন্দ বুথফেরত জরিপ বলছে, ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখবে তৃণমূল কংগ্রেস। দলটি আসন পেতে পারে ১৫২ থেকে ১৫৪টি। বিজেপির ঘরে যেতে পারে ১০৯ থেকে ১২১টি আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে ১৪ থেকে ২৫টি আসন। এই জরিপ ঠিক থাকলে এককভাবেই তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে তৃণমূল।
একই আভাস এনডিটিভির বুথফেরত জরিপেও। তাদের হিসাবে মমতার ঘাসফুল মার্কা ২৯৪টি আসনের মধ্যে পেতে পারে ১৫৬টি আসন। আর পদ্মফুল মার্কা বিজেপি পেতে পারে ১২১টি আসন। ১৭টি আসন যেতে পারে অন্যদের ঘরে।
মমতার অনায়াস জয়ের কথা বলছে টাইমস নাউয়ের জরিপও। এতে দেখা যাচ্ছে, মমতা পাচ্ছেন ১৫৮টি আসন, আর মোদির বিজেপি পেতে পারেন ১১৫টি আসন। অন্যদের ঘরে যেতে পারে ২১টি আসন।
‘অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া’ এর জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি পেতে পারে ১৩৪ থেকে ১৬০টি আসন। তৃণমূল পেতে পারে ১৩০ থেকে ১৫৬টি আসন। অন্যান্য দলের ঘরে যেতে পারে তিনটি আসন।
মমতার জয়জয়কারের কথা বলছে ‘গ্রাউন্ড জিরো রিসার্চ’। তাদের হিসাবে তৃণমূল পেতে পারে ১৫৪ থেকে ১৮৬টি। বিজেপি পেতে পারে ৯৬ থেকে ১২৪টি আসন। বামসহ অন্যরা পেতে পারে ছয়টি থেকে ১৪টি আসন।
পশ্চিমবঙ্গে বামদের আধিপত্য গুঁড়িয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৬ সালেও নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয় পায় দলটি। সেবার ২৯৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল পায় ২১১টি আসন। কংগ্রেস জিতে ৪৪টি আসন; বাম ফ্রন্ট ৩২টি আসন।
আর বিজেপি পায় মাত্র তিনটি আসন। ওই নির্বাচনের পর থেকেই এই রাজ্যে শক্ত ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা নরেন্দ্র মোদির দলটি। বুথফেরত জরিপ বলছে, এই আশা পূর্ণ হবে না দলটির। ক্ষমতায় থেকে যাবেন ‘দিদি’।
সূত্র:নিউজবাংলা২৪.কম