রাত ৯:১৯,   বুধবার,   ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১০ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রাস্তায় নামছেন শ্রমিকরা, চালু হতে পারে গণপরিবহন

নিউজসুনামগঞ্জ ডেস্ক:
লকডাউনে গণপরিবহন চালুর দাবিতে কর্মহীন পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলছেন, করোনা মহামারির মধ্যে চলমান লকডাউনে দেশে দোকানপাট, অফিস, কারখানাসহ সবই সচল। চলছে না শুধু গণপরিবহন।
তারা আরও বলেন, অন্যান্য খাতে প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হলেও এ খাত উপেক্ষিত। এ পেশায় জড়িত ৫০ লাখ শ্রমিক এখন নিরুপায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে হলেও গণপরিবহন চালুর দাবি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের। দাবি আদায়ে আগামী রবিবার সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে শ্রমিকরা। তাদের দাবির সমর্থনে ইতিবাচক ইঙ্গিতও দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গণপরিবহন চালুসহ তিন দফা দাবিতে আগামী ২ মে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল এবং ৪ মে জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
গণপরিবহন চলাচলের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আশ্বাস পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন,অনেকবার সেতুমন্ত্রীকে বলেছি। অনেক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কোনও বাস্তবায়ন দেখছি না।
এদিকে গত ২৪ এপ্রিল সড়ক জোন, বিআরটিসি ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‌‌‌‌‌জনস্বার্থ বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে সরকার গণপরিবহন চালুর সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।
মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর এতোদিন চুপ ছিল পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। কিন্তু ২৮ এপ্রিল লকডাউনের মেয়াদ আবার বাড়িয়ে গণপরিবহনও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই পরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো।

দিনে দুই কোটি যাত্রী জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ যাত্রী সড়কপথে যাতায়াত করেন। জাতীয় অর্থনীতি গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এ খাত। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই কোটি যাত্রী গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। এ খাতে ৩০ লাখেরও বেশি শ্রমিক জড়িত। বছরে সরকার এ খাত থেকে হাজার কোটি টাকার রাজস্বও আদায় করে। চার লাখের মতো মোটর মেকানিক ও যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীও এ খাতে জড়িত।
রমেশ চন্দ্র ঘোষ আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালুর দাবি জানাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস সরকার এটি বিবেচনা করবে।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা ও মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালুর দাবি করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, লকডাউনে বাস ছাড়া সবই চলছে। বাস চালু না থাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিকল্পভাবে বিভিন্ন পরিবহনে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে দুই সিটে একজন যাত্রী নিয়ে বাস চালু থাকলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে না। বাস চালুর ব্যাপারে সারা দেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সাংঘাতিক ক্ষোভ বিরাজ করছে বলেও তিনি জানান। জানতে চাইলে সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমরা সেতুমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকার যদি সিদ্ধান্ত দেয় তবে সব শর্ত মেনে যানবাহন চালু করবো।’
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরিবহন নেতা বলেছেন, সড়ক অবরোধ করে দোকান-মালিক সমিতিগুলোর বিক্ষোভের পর সরকার দোকানপাট খুলে দিয়েছে। কিন্তু পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা রাস্তায় নামেনি। যে কারণে সরকার পরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়নি। তারা বলেছেন দাবি জানালে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এ জন্য কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতিও। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন চালুর দাবি জানায়।