সুরমার পানি বিপদসীমার উপরে, বড় বন্যার আশঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার:
টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীসহ সকল শাখা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে জেলার নিম্নাঞ্চল।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল থেকে সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে দিয়ে বিপদ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ইতিই মধ্যে বন্যা সতর্কতা জারি করেছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের সুরমাসহ সব কটি শাখা নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, কাজির পয়েন্ট, নতুন পাড়া ঝাওয়ার হাওরের পাশের এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। যে কোনও সময় পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে প্লাবিত হয়ে পড়েছে ছাতক উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার তাহিরপুর বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সম্প্রতি জেলায় ১৫টিরও বেশি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকায় তড়িঘড়ি করে ধান কেটে নিয়েছিলেন যেসব কৃষক, তারাও নতুন বিপদের সম্মুখীন। এছাড়া ভারতের আসামে বন্যা পরিস্থিতি এবং মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা আবহাওয়া অধিদপ্ততরের।
সুনামগঞ্জের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা তজু মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টির আর পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়তে শুরু করেছে। বাড়িঘর ও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে এই এলাকার মানুষ।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বসতভিটা হারানো ছাত্তার আলী, পাহাড়ি ঢলে আমার সব নিয়ে গেছে। আমার আর কিছুই বাকী থাকেনি। কাম কাজ করে টাকা জমিয়ে একটা ঘর করেছিলাম, কিন্তু আমার কষ্টের ঘরটাও পাহাড়ি ঢলে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। আমি একেবারে অসহায় হয়ে গেলাম। এরকম একটা ঘর কি আর আমি বানাতে পারবো? আমারতো এমন একটা ঘর করার মত ক্ষমতা নাই। এখন আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আল্লাহের কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ( এলজিইডি) সুনামগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মাহবুব আলম জানিয়েছেন, গত ২ দিনে নদ নদীগুলোতে পানির চাপ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জের গজারিয়া নদীর রাবার ড্যামের পাম্প হাউজ নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আনুমানিক সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের সড়কের প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ভারতের মেঘালয়ে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।আজ নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।