সকাল ৮:৪৬,   শুক্রবার,   ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সেন দুর্গের দখল নিতে মরিয়া আল আমিন চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনটি সারা দেশেই পরিচিত প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের আসন হিসেবে। ২০১৭ সালে সুরঞ্জিত সেন মারা যাওয়ার পর উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন তার স্ত্রী জয়া সেন গুপ্তা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালেও নৌকার মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে আসনটি নিজের দখলে রাখেন সেন পত্নী। এই আসন থেকে সুরঞ্জিত স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মোট ৭বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আর তার স্ত্রীর ১বার। ফলে এই আসনটি পরিচিতি পায় সেন দুর্গ হিসেবে।

১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদকে পরাজিত করে ন্যাপ থেকে নির্বাচিত হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

কিন্ত দুর্গের দখল নিয়ে হুমকিতে পড়েছেন সেন পত্নী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে পুলিশের বর্তমান আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে। প্রায় ৬০ বছর ধরে ধরে রাখা দুর্গ অক্ষুন রাখতে সেনপত্নী লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মনোনয়ন বিতরণের কিছু দিন আগে শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এবারের নির্বাচনে এই দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রচার প্রচারণায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। দুই প্রার্থীই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের।

তবে ইতিমধ্যে জয়া সেন পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাত মূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। সে জন্য তিনি দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগও দেন। তাকে যেন এখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

এই আসনে সেন পরিবারের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। এই আসনে ভোটের হিসাব নিকাশে প্রভাব রাখতে পারে সংখ্যালঘু ভোট। পক্ষে বিপক্ষে একে অপরের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা করছেন। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন দলীয় প্রার্থীর কাটা হয়ে দাঁড়িছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। জানা যায়, নৌকা ও কাঁচি প্রতীকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দুই পক্ষের উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

এই দুই প্রার্থীকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জয়ার পক্ষে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়সহ একটা অংশ। তবে আরেকটা অংশ কাজ করছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর পক্ষে। সভাপতি-সম্পাদকের বাইরে অধিকাংশ নেতাকর্মী আইজিপির ভাইয়ের পক্ষে মাঠে থাকায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে জয়ার।

স্থানীয় ভোটার রঞ্জন দাশ বলেন, আমাদরে দিরাই শাল্লা সব সময় অবহেলিত। জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এই আসনে এমপি থাকার পরও তেমন কোন উন্নয়ন হয় নি। শাল্লায় এখনও সরাসরি সড়ক যোগযোগ গড়ে ওঠেনি। কাজ চলমান কবে শেষ হবে কেউ জানে না। দিরাইয়ে একই অবস্থা। যে আমাদের এলাকার উন্নয়নে মনোযোগ দেবে তাকেই মূলত আমরা নির্বাচিত করতে চাই।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তা বলেন, আমার স্বামী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এখানে জনপ্রতিনিধি ছিলেন। পরে আমি এখান থেকে উপ-নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হই। এবারও আমি জয়ী হব বলে আশাবাদী। কিছু প্রশাসনের লোকের বাধা ছাড়া নির্বাচনে আমি আর কোনও বাধা মনে করছি না। আপনারা জানের যে ইতি মধ্যে আমি একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। স্বতন্ত্র হলেও দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গেই আছেন। নির্বাচনে আমাদেরই জয় হবে।

নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আল আমিন চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। আইজিপির ভাই হিসেবে নয়। নৌকা না পেয়ে তিনি বিরোধীতার জন্য উল্টোপাল্টা বলছেন। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এখানে কারও কোনো ভোট ব্যাংক নেই।