“৯৯৯” মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া বৃদ্বাকে ছেলের হাতে তুলে দিলেন রাজীব
স্টাফ রিপোর্টার:
“৯৯৯” ফোন করে হামিদা বেগম (৭০) নামরে বৃদ্ধাকে পুলিশের মাধ্যমে তার ছেলের কাছে তুলে দিলেন রাজীব সেন নামের এক যুবক।
সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা রাজিব তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউপির “নতুন ব্রাক্ষণগাঁও” গ্রামে বেড়াতে যান।
গত শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে বাড়ির পাশের সড়কে হাটতে বের হয়ে একজন বৃদ্ধা মহিলাকে সড়কের একপাশে মাটিতে শায়িতা অবস্থায় দেখতে পান। উনার বয়স আনুমানিক ৭০ বছরে বেশি হবে। এটা দেখে তাকে উদ্ধারের তৎপরতা চালান তিনি।
রাজীব সেন নিউজসুনামগঞ্জ.কমকে জানান, এই শীতের রাতে মাটিতে শায়িতা অবস্থায় উনাকে দেখে আমার খুবই খারাপ লাগে। প্রথমে এই বৃদ্ধাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাবলেও পাশে গিয়ে উনার সাথে কথা বলে বুজতে পারি, কোন বাজে সন্তান উনাকে এই অবস্থায় রেখে গেছে। তারপর আমার বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি প্রায় দুইরাত ধরে এই বৃদ্ধা খোলা আকাশের নিচে এই জায়গায় শুয়ে বসে দিনাতিপাত করছেন। আমার বাড়ি থেকে ও আশেপাশের প্রতিবেশীরা মিলে উনাকে কয়েকবার কিছু খাবার ও শীত নিবারণের জন্য কাপড় দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। পায়খানা ও প্রশ্রাবের দূর্গন্ধে তার কাছে কেউ যেতে রাজি ছিলনা।
এই শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে এই বৃদ্ধা মহিলা নিজেকে সামলাতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত তাঁর শরীর কাপঁছিল। তারপর আমি ও আমার ছোট দুইভাই মিলে উনার জন্য কিছু খাবার ও শীত নিবারণের জন্য একটি টুপি ও চাদরের ব্যবস্থা করি।
তারপর উনাকে এই জায়গা থেকে অপেক্ষাকৃত শুস্ক একটি জায়গায় রেখে রাতের খাবার ও প্যারাসিটামল ঔষধ খাইয়ে দেই। তারপর ঘরে এসে জরুরী সেবা “৯৯৯” এ যখন ফোন দেই তখন ঘড়িতে সময় রাত ১১ টা।
পরে ফোনে উনাদেরকে বিস্তারিত জানানোর পর সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার যোগাযোগ করিয়ে দেন।
সদর থানার ডিউটি অফিসার আমার সাথে যোগাযোগ করেন।তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও যানবাহন স্বল্পতা ও রাস্তার দূরবস্থার কথা চিন্তা করে উনাকে আজকে সকালে আসার কথা বলি।
আজ শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে পুলিশের টিম আসতে বিলম্ব হওয়ায় পুনরায় ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে আবারো বিস্তারিত জানাই।
পরে ৯৯৯ থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সাথে আমার কথা বলিয়ে দেন। ওসি সাহেব সব ঘটনা শুনে,সমাজসেবা কার্যালয়ের সাথে কথা বলে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়ে দেন।
আমার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌছেন ডিএসবির এস.আই লোকমান।
আশ্চর্যজনক ভাবে অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরেও আমাদের কাছে এই বৃদ্ধা মহিলা টি নিজের সম্পর্কে কিছুই না বললেও লোকমান সাহেবের কাছে উনি নিজের ঠিকানা,স্বামী ও ছেলের নাম বলেন। পরে বৃদ্বার গ্রাম বিশ্বম্ভপুর উপজেলার মুয়াজোড়া গ্রামে তার ছেলে কেনু মিয়া (৪০) সাথে একজন ইউপি সদস্যর’র মাধ্যমে যোগাযোগ করে পুলিশ।
উনার ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে জানা যায় এই বৃদ্ধা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ আছেন। উনার খুঁজে উনার ছেলে আশেপাশের এলাকায় মাইকিং ও নাকি করিয়েছেন।
পরে সাথে সাথেই উনার ছেলে মটোরবাইক ভাড়া করে মায়ের কাছে আসার জন্য রওয়ানা হয়।
ঐ বৃদ্ধ মহিলাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আইন মোতাবেক তার ছেলের জিম্মায় দেয়া হয়।
সুনামগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) হাবীবুর রহমান জানান, ঐ মহিলা কি ভাবে এখানে এলেন নিজেই বলতে পারছেন না। অতিরিক্ত বয়স হওয়ার ফলে কি ভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন কিছুই বলতে পারেন নি। আমরা তাকে তার ছেলের জিম্মায় দিয়েছি।