সকাল ৯:১৪,   শনিবার,   ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আবারও সুনামগঞ্জে আসছেন মামুনুল হক, অতিথি সরকার দলের নেতারা

স্টাফ রিপোর্টার:
আগামী ২১ মার্চ ফের সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় আসছেন হেফাজত নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক। খাদিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা জামালগঞ্জের আয়োজনে খতমে বুখারি ও ইসলামী মহা সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাদ জোহর বক্তব্যে রাখবেন তিনি।
জামালগঞ্জ হেলিপ্যাড মাঠে সমাবেশ সফল করার লক্ষে করা হচ্ছে পোস্টারিং, বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। আর এসব লিফলেটে-পোস্টারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে নাম আছে- জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরী, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার (সাজিব), জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম (সুহেল) এর, নাম আছে জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর।
আওয়ামীলীগ নেতা ও চেয়ারম্যানের নাম দেয়া হলেও তারা এখন সবাই এক বাক্য তা অস্বীকার করছেন এবং থানায় জিডি করে দায় এড়াতে চাচ্ছেন।
তবে অনুমতি না নিয়ে হেফাজতের সমাবেশের পোস্টারে জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর নাম ব্যবহারের কারণে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) রাতে থানায় জিডি করেছেন তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, গতকাল মাদ্রাসার মুহতামিম কাউসার সাহেবকে ডাকিয়ে নিয়ে বলেছি যে আমার নাম পোস্টার থেকে কাটার জন্য। এ ব্যাপারে তেমন আর কিছু জানি না। এই ওয়াজের সাথে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। আমাকে না জানিয়ে নাম দেয়ার কারণে ইউএনও ডিসি মহোদয় ও পুলিশ প্রশাসনকে গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।
পোস্টারে নাম দেয়া আরেক অতিথি সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মুকিত চৌধুরী বলেন, আমি কয়েক মাস ধরে অসুস্থ সিলেটে চিকিৎসা নিচ্ছ পৌস্টারে নাম দেয়ার ব্যাপারে কেউ আমার যোগাযোগ করে নি। এই ওয়াজ মাহফিলের সাথে আমার কোনও প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।
জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি গত কয় সিলেটে ছিলাম রোগী নিয়ে। গতকাল এসে দেখি আমার নাম পোস্টারে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নাম ব্যবহারের ব্যাপারে কোনও কিছুই আমি জানি না। এ জন্য আমি জামালগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি।
বৈঠকে আয়োজক কমিটির সদস্য ও খাদিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা কাওছার আহমদ জানান, অনেকের অনুমতি নিয়ে নাম ব্যবহার করা হয়েছিল। আবার অনেকের নাম দেয়ার পরে অনুমতি নেয়া হয়েছিল। তবে আমরা বলেছি- এরপর তাদের নাম ব্যবহার করবো না। আমরা অনেককেই দাওয়াত দেয়ার পর নাম দিয়েছে। আর মোহাম্মদ আলী সাহেব আমাদের মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে নাম রাখা হয়েছে। প্রথমে এই মাদ্রাসার কার্যক্রম উনার বাসা থেকেই শুরু হয়েছিল পরে জায়গা ক্রয় করে নতুন স্থানে নেয়া হয়েছে।
তবে ইউএনও অফিসে বৈঠকের পর আমরা তাদের বলেছি পরের প্রচার-প্রচারণায় আমরা আর নাম ব্যবহার করবো না। উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে আমার সরাসরি কথা হয় নাই। উনার কাছের একজনের সাথে যোগাযোগ করে উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম দিয়েছিলাম।
জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, সমাবেশের জন্য অনুমতি নেয়ার জন্য কোনও আবেদন আমাদের কাছে করা হয়নি। আর পোস্টারে নাম ব্যবহারের কারণে গতকাল ১৮ মার্চ আয়োজন কমিটির লোকজনকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে বৈঠক হয়।
জামালগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন- পোস্টারে নাম দেয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছিল- আর আমাদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহেব আয়োজক কমিটির লোককে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। সে শুধু বলেছে তাদেরকে জানানো হয়েছিল এখন তারা বলছে জানে না। সে এও বলছে এখন হয়তো পরিস্থিতির কারণে অতিথিরা না করছেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা এই পরিস্থিতিতে ধর্মীয় কোনও সভা সমাবেশের অনুমতি দিবও না। আগামীকাল ১১টায় জেলা হেফাজতের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করব তারা যেন উস্কানি মূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকেন।
এদিকে সমাবেশ সফলের লক্ষে উপজেলাজুড়ে ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো হচ্ছে। করা হচ্ছে মাইকিং। তবে সমাবেশের আরও মাত্র দুদিন থাকলেও এখনও নেয়া হয়নি কোন অনুমতি।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে হেফাজতে ইসলাম শানে রিসালাত নামে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে ভাস্কর-বিরোধী বক্তব্যে দিয়ে আলোচনায় উঠে আসা হেফাজত নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঝুমন দাশ নামের এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে যে স্ট্যাটাস দেন, তা হেফাজতের দৃষ্টিতে আপত্তিকর মনে হয়েছে। তারা পরদিন এর প্রতিবাদে সমাবেশও করেছে। প্রশাসন বিষয়টি দ্রুত আমলে নিয়ে ঝুমন দাশকে প্রেপ্তার করে।
তবে পরদিন ১৭ মার্চ মামুনুল হকের অনুসারী কয়েকশ যুবক, কিশোর লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাঁও এর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় তারা ঘরে থাকা পারিবারিক মূর্তিসহ ভাঙচুর চালায় এবং সম্পদের ক্ষতি করে। তবে তাদের আগমন দেখে নোয়াগাঁও গ্রামের নারী-পুরুষ গ্রাম ছেড়ে হাওরে চলে যায়। যার কারণে কেউ আঘাত প্রাপ্ত হয়নি।
হামলার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ডাকা হেফাজতের মহাসমাবেশকে ঘিরে ফের আতঙ্ক বাড়ছে ভাটির জনপদে।