রাত ১:২৪,   বৃহস্পতিবার,   ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১০ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চীন-রাশিয়ার টিকা পেতে ‘কমপক্ষে দুই সপ্তাহ’

নিউজসুনামগঞ্জ ডেস্ক:
রাশিয়ার ‘স্পুৎনিক-ভি’র মত চীনের তৈরি একটি করোনাভাইরাসের টিকাও বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের ‘অনুমোদন পেতে যাচ্ছে’, কিন্তু সব প্রক্রিয়া শেষ করে টিকা আনতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেছেন, “কাগজপত্র ঠিক করা, অ্যাকচুয়াল মুভমেন্ট… দুই সপ্তাহের আগে বোধহয় সম্ভব না।”
দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উদ্যোগে ‘কোভিড ইকুইপমেন্ট স্টোরেজ’ তৈরির বিষয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভির মত চীনা টিকারও জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে।” ইমারজেন্সি ইউজ অথরাইজেশনের ব্যবস্থা করতে পারব। রুশ ও চীনাদের সাথে আমরা একইভাবে এগোচ্ছি। আমরা লাইনটা করে দিয়েছি। এখন আনা-নেওয়া সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই দেখবে।”
করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা হিসেবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ গত ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি পায়। তার আগেই সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি হয়।
কোভিশিল্ড দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণ টিকাদান শুরু হয়। কিন্তু সরবরাহ সঙ্কটে ভারত থেকে টিকার নতুন চালান না আসায় অন্য উৎস থেকে টিকা আনার বিষয়ে উদ্যোগী হয় সরকার। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করা ‘স্পুৎনিক-ভি’ টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। মে মাসেই এ টিকার ৪০ লাখ ডোজ দেশে আসবে বলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান আশা করছেন।
তিনি জানিয়েছেন, স্পুৎনিক টিকা আমদানি করা হবে সরকারিভাবে। এ বিষয়ে সরকারের একটি কমিটি করা হয়েছে। কী পরিমাণ টিকা আসবে, কত দাম হবে তা ওই কমিটিই রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে ঠিক করবে। প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল মাহবুব দুপুরে বলেছিলেন, “চীনের সিনোফার্মের টিকার অনুমোদনের ব্যাপারেও আমরা কাজ করছি। আমরা হয়ত খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব।” পরে ‘কোভিড ইকুইপমেন্ট স্টোরেজ’ নিয়ে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, সরকার ‘জি টু জি’ চুক্তির মাধ্যমে টিকা আনাতে চীন ও রাশিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “আমেরিকায় নাকি অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬০ মিলিয়ন ডোজ উদ্বৃত্ত আছে, আমরা ওখান থেকে কিছু নিয়ে আসার জন্য ওদের রিকোয়েস্ট করছি। আমরা যেখান থেকে পাই, সেখান থেকে আনব।”

আর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের কেনা বাকি টিকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “তাদের বলেছি, আমাদের জরুরি প্রয়োজন মেটাও। তাৎক্ষণিক প্রয়োজন ৩০ লাখ, সেটা অন্তত দাও। এখনো রেসপন্স পাইনি। তারা সবসময় বলছে ‘কিপ ইউর ফিঙ্গার ক্রসড’।”
চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও গত চার মাসে দুই চালানে পাওয়া গেছে মোট ৭০ লাখ ডোজ। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে আরও ৩২ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড টিকা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় ভারত মার্চে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে বাংলাদেশের কেনা বাকি ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা অনিশ্চয়তায় পড়ে। মজুদ কমে আসায় দেশে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া এখন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। রাশিয়ার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা স্পুৎনিক বাংলাদেশে অনুমোদন কোভিড-১৯ টিকা পেতে চীনা উদ্যোগে বাংলাদেশ।

কী আছে চীনা উদ্যোগে?
দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উদ্যোগে ‘কোভিড ইকুইপমেন্ট স্টোরেজ’ তৈরির বিষয়ে দুপুরের ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ছাড়াও আফগানিস্তান, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন বৈঠকে। বাংলাদেশসহ এই পাঁচ দেশ চীনের আহ্বানে ‘সাউথ এশিয়া অ্যান্ড চায়না কোভিড ইকুইপমেন্ট স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি’ গড়তে সম্মত হয়েছে। চীন সরকার ভারতকেও এই ‘ইমার্জেন্সি ফ্যাসিলিটিতে’ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যখনই কোনো দেশের প্রয়োজন হবে, তারা এ স্টোরেজ সুবিধা থেকে সাহায্য নিতে পারবে। টিকার পাশাপাশি অক্সিজেনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রাখার ব্যবস্থাও এতে থাকবে।
এই স্টোরেজ কোথায় হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “লোকেশনটা এখনো ঠিক হয়নি। ওরা ঠিক করবে। আমরা বলেছি, সমুদ্রের ধারে কাছে হলে সুবিধা হয়।”
স্টোরেজ গড়ে তোলার পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য চীন দুটি প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী মোমেন।
তিনি বলেন, “পোস্ট কোভিড পোভার্টি এলিভেশন সেন্টার করতে চাচ্ছেন তারা। দেশে দেশে দারিদ্র্য বাড়ছে। তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও বিশেষ জ্ঞান শেয়ার করতে চান।
সেইসঙ্গে গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতিকে বিকশিত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স ফোরাম করার প্রস্তাবও চীন দিয়েছে বলে জানান তিনি।