সকাল ১১:২২,   বুধবার,   ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১০ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ২১শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

পরিত্যক্ত বিমানবন্দর সচল চায় এয়ারলাইনসগুলো

নিউজসুনামগঞ্জ ডেস্ক:
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও দেশে বর্তমানে আরও ছয়টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে প্রতিদিন ফ্লাইট ওঠানামা করছে। এই বিমানবন্দরগুলো হলো সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী, বরিশাল ও কক্সবাজার বিমানবন্দর। এর মধ্যে সৈয়দপুর ও কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজ শুরু করেছে সরকার।
দেশের তিন জেলায় তিনটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর সংস্কার করে ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন। এর পাশাপাশি পটুয়াখালীর এয়ারস্ট্রিপ সচল ও খুলনার খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ ও পার্বত্য এলাকায় একটি নতুন এয়ারস্ট্রিপ তৈরির আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি। যেসব বিমানবন্দর সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে, সেগুলো হলো পাবনার ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শমসেরনগর।
পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। একসময় এ বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট চালাত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। যাত্রীর অভাবে ১৯৯৬ সালে ৩ নভেম্বর বিমানবন্দরটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর ১৭ বছর পর ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর এই বিমানবন্দরে ফ্লাইট শুরু করে বেসরকারি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। পরের বছর ২০১৪ সালের ২৯ মে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে বিমানবন্দরটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে বিমানবন্দরটি।
ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ এলাকার বিমানবন্দরটিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মাণ করা হয়। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বন্দরটি সচল ছিল। এরপর ১৯৯৪ সালে এটি সংস্কার করে চালুর একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সে উদ্যোগ আর বাস্তবায়ন হয়নি। বিমানবন্দরটির যে রানওয়ে রয়েছে তার দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৭২০ ফুট।
মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দরটিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি। বর্তমানে বন্দরটি ব্যবহার হচ্ছে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজে। অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মনে করি বাগেরহাটের বিমানবন্দরটা অনেক দিন ধরে পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে, এটা অবশ্যই তৈরি করা উচিত। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে একটা ছোটখাটো এয়ারস্ট্রিপ তৈরি করা উচিত।
‘ঈশ্বরদী বিমানবন্দর এবং পটুয়াখালীতে যে এয়ারস্ট্রিপ রয়েছে, এগুলোকে সংস্কার করে চালু করা। একই সাথে ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জে যে বিমানবন্দর আছে, সেটিকে সংস্কার করে চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও দেশে বর্তমানে আরও ছয়টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে প্রতিদিন ফ্লাইট ওঠানামা করছে। এই বিমানবন্দরগুলো হলো সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী, বরিশাল ও কক্সবাজার বিমানবন্দর। এর মধ্যে সৈয়দপুর ও কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজ শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া খুলনায় খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল সরকার। তবে এটি এখন স্থগিত রয়েছে।
খান জাহান আলী বিমানবন্দর সম্বন্ধে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘খুলনার খান জাহান আলী বিমানবন্দর নিয়ে সরকারের চিন্তা ছিল এটা পিপিই বা সরকারি- বেসরকারি অংশীদারত্বে নির্মাণ হবে। এটার বিষয়ে ভারতীয় একটি ফার্ম স্টাডিও করেছে। তারা দেখেছে পিপিইতে করলে এটার ভায়াবিলিটি কতটা হবে।
‘তারা দেখেছে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে টাকা দিয়ে বিমানবন্দর নির্মাণ করলে খুব বেশি লাভজনক হচ্ছে না। তারা কিছু সাজেশন দিয়ে বলেছিল, এখানে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ভর্তুকি দিতে হবে অথবা যাত্রীরা পার টিকেটে অতিরিক্ত টাকা দিলে এটাকে লাভজনক করা যাবে। এজন্য এই প্রকল্প আপাতত স্থগিত আছে।’
এই মুহূর্তে দেশে নতুন কোনো বিমানবন্দরের চাহিদা আছে কি না, তা জানতে চাইলে অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মফিজুর রহমান বলেন, ‘সার্ভিস না থাকলে ডিমান্ড আছে কি না সেটা বোঝা যাবে না। গত ৫ বছর আগেও সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট চলত না। এখানে ফ্লাইট দেয়া হয়েছে। এখন এত ডিমান্ড যে ফ্লাইটে কুলানো যাচ্ছে না। ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পারসপেকটিভ থেকে আমরা যেটা বুঝি, এই বিমানবন্দরগুলো করলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।’
বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর হিসাবে প্রতি বছর অভ্যন্তরীণ অ্যাভিয়েশনের বাজার বাড়ছে সাত থেকে আট শতাংশ হারে। চাহিদা পূরণ করতে গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানসহ তিনটি এয়ারলাইনস তাদের বহরে যুক্ত করেছে বেশ কয়েকটি নতুন উড়োজাহাজ।
বেসরকারি খাতে দেশের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাপরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৫ সালে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রীসংখ্যা ছিল ৯ লাখ ১২ হাজার। ২০১৬ সালে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখে। আবার ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এ সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়।
‘এই দুই বছর গড়ে ১৯ থেকে ২০ লাখ যাত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াত করেছে। এ হিসাবে আমরা দেখছি স্বাভাবিক সময়ে এ অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে সাত থেকে আট শতাংশ হারে। এ অবস্থায় যদি পাবনার ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর অন্তত চালু করা যায় তাহলে অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার আরও বাড়বে।’
তবে এখনই দেশে নতুন কোনো বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, ‘মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিমানবন্দরের চাহিদা তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন স্বাচ্ছন্দ্যে কম সময়ে ভ্রমণ করতে চায়।
‘আমাদের এই বিমানবন্দরগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছিল। বর্তমানে আমাদের এয়ারলাইনসগুলোর বহরে যে উড়োজাহাজ রয়েছে, এগুলো এখানে নামতে পারবে না। বিমানবন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে এবং একেবারে নতুন করেই করতে হবে। বর্তমান রানওয়েতে এগুলো চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরদীতে ইপিজেড হয়েছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে, সব মিলিয়ে এখানে এয়ারপোর্ট করার মতো। যে জায়গাগুলোতে বিমানবন্দর ছিল, এগুলো পরিচালনার ব্যপারে আমরা অনেকগুলো কাজে হাত দিয়েছি। কিন্তু আপাতত যেগুলো চালু আছে, সেগুলো আপগ্রেড করার কাজকেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। এগুলো শেষ হলে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক অন্যগুলোও হবে।’
সূত্র:নিউজবাংলা২৪.কম