রাত ১:১৭,   শনিবার,   ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শহর যেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নগরী

স্টাফ রিপোর্টার:
সরকারি নানা উদ্যোগ ও সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্তে¡ও সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার কারণে সুনামগঞ্জে বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সেই সাথে জেলার এক মাত্র ২০৫ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে দূর্গন্ধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, চিকিৎসক সংকট ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যকে পুঁজি করে পৌর শহর যেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
এসব সেন্টারে গিয়ে প্রকৃত চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। ফলে সেবা নয়, এখানে বাণিজ্যই মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। এখানকার হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার সংকট ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষ ভালো চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায় প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এবং শনিবার ছুটছেন শহরে গড়ে উঠা বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে।
কিন্তু সেখানে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে প্রথমে তাদের হাতে প্রেসক্রিপশনে লিখে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দ্রæত সেগুলো করে তাদের পুনরায় দেখানোর জন্যও দেওয়া হয় তাগিদ। অনেকের অভিযোগ রোগ নির্ণয়ের অজুহাতে দেয়া হয় বাড়তি পরিক্ষা নিরীক্ষা। ব্যয় বাড়ের সাধারণ রোগীর আর মুনাফা হয় তথাকথিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ মিয়া। সংসার চালাতে প্রতিদিন ভোরে জেলা স্টেডিয়াম মাঠের এক কোনায় চায়ের দোকান খুলে চা বিক্রি করেন তিনি। গত কিছুদিন আগে হঠাৎ করে শরীর চুলকালে ডাক্তারের কাছে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে পড়তে হয় তাকে পরীক্ষা নামক ভোগান্তিতে। পড়া লেখা কম জানায় কোন পরীক্ষা কত টাকা এই সম্পর্কে তার জানা নেই।
চা বিক্রেতা সাজ্জাদ মিয়া নিউজসুনামগঞ্জডটকমকে, ডাক্তার দেখাতে গিয়ে অহেতুক ৩ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি।
আরেক জন মানিক রঞ্জন দাস। পৌর শহরের চানা, পোলাও এর দোকান দিয়ে সংসার চলে তার। তবে ডাক্তার দেখানোর ক্ষেত্রে তার রয়েছে অনেকটা তিক্ত অভিজ্ঞতা। অনেক সময় উপায় না পেয়ে পরিবারের জোরাজুরির কারণে ডাক্তারের কাছে যেতে বাধ্য হন।
তিনি নিউজসুনামগঞ্জডটকমকে বলেন, ২০২০ সাল থেকে ডাক্তার দেখাতে দেখাতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। ১৩ থেকে ১৪ হাজার দামের কত রকমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছি। অহেতুক টাকা নষ্ট হয়েছে কাজের কাজ কিছুই হয় নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ২৯ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সব মিলিয়ে সুনামগঞ্জ জেলায় বেসরকারি ক্লিনিক আছে ১০ টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ৫৯ টি।
প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সিলেট ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেডিসিন, কিডনি,অর্থোপেডিক্স
থেকে শুরু করে সব রকমের প্রায় শতাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা শহরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসলে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায় রোগীরা ভিড় করেন।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে রোগী দেখা। ফলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সহ পুরো এক সপ্তাহে এই সেন্টার গুলোতে প্রায় কোটি টাকার মত শুধু বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়।
এমনকি ডাক্তারের আগমন উপলক্ষে পুরো জেলায় করানো হয় মাইকিং। টানানো হয় পোস্টার বিল বোর্ড, বিতরণ করা হয় লিফলেট হ্যান্ড বিল। প্রযুক্তির কল্যাণে অনলাইনেও প্রচার প্রচারণা দেয়া হয়। সপ্তাহে তিন দিন যেন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের হাট বসে।
এদিকে পৌর শহরে গড়ে উঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে দালাল চক্ররা গ্রামের অসহায় মানুষকে ভুলবাল বুজিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে একজন তাহিরপুর থেকে আসা রাহিমা খাতুন নিউজসুনামগঞ্জডটকমকে বলেন, ভালো ডাক্তারের আসায় সুনামগঞ্জে এসেছিলাম। কিন্তু গাড়ি থেকে নামতেই রিস্কা চালক যখন দেখল আমি অসুস্থ তখন সে আমাকে আর আমার স্বামীকে ভুলবাল বুঝিয়ে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে এসে অনেক টাকা শুধু বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করিয়েছি কিন্তু আমার অসুস্থতা কমেনি।
এই সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও নজর দারি বাড়াবে সেই প্রত্যাশা সুনামগঞ্জ বাসীর।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা.আহমদ হোসেন নিউজসুনামগঞ্জডটকমকে বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে চুক্তি করে প্রেসক্রিপশনে অহেতুক স্বাস্থ্য পরীক্ষা লিখে দিয়ে যদি কোন ডাক্তার বাড়তি টাকা আয় করে তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আর বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।