সকাল ৭:০০,   বৃহস্পতিবার,   ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যনগরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর উপর হামলা, আবারও হামলার ভয়ে পরুষ শূন্য গ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার:
মধ্যনগরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় আহত পরাজিত প্রার্থী ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যদিকে ভয়ে, আতঙ্কে, নিরাপত্তহীনতায় বাড়ি ছেড়েছেন তার পরিবারের লোকজন। জয়ী প্রার্থীর স্বজনদের দাপটে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক পরুষেরাও বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
হামলার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ( ১০ জুন) সোমবার পর্যন্ত কোনও অভিযোগ বা মামলা দায়ের করতে পারি নি হামলার শিকার চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমানের কোনও লোক জন। উল্টো তাদের বিরুদ্বে মধ্যে নগর থানায় দায়ের হয়েছে মামলা। আবার হামলা বা গ্রেফতার হতে পারে সাইদুর রহমানের সমর্থকরা এই আতংকে তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।


গত ৭ জুন (শুক্রবার) সন্ধ্যায় মধ্যনগরের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়া ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান ও সমর্থকদের উপর অর্তকিত হামলা চালায় ঘটনার পর এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার রাতে ১৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫ থেকে ১৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাকের এক সমর্থক।
জয়ী চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক ভ‚ঁইয়া পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা (ডিআইজ) আব্দুল বাতেনের ভাই ও অবসর প্রাপ্ত ব্যাংকার। সাইদুর রহমান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
গত ৫ জুন চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন সাইদুর রহমান।
পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমানের সমর্থক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক নারী সদস্য দাতিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বললেন, গ্রামে দেড়শ পরিবারের বাস। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে কমপক্ষে ১০০ পরিবারের লোকজন পাশের সাতুর নতুন বাজারে যাচ্ছে না। এই পরিবার গুলোর বেশিরভাগ পুরুষেরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। মহিলারাও আছেন আতঙ্কে। এরা সকলেই সাইদুর রহমানের সমর্থক।
দাতিরা পাড়া আরেক গ্রামের বাসিন্দা দিলারা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায়  সাইদুর রহমান আহত হবার পর আত্মীয় স্বজন গিয়ে দেখতে পারেন নি। সকলের বাড়িঘর ঘেরাও দেয়া ছিল। সাইদুর রহমানের পরিবার ঘর তালা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তার পাশের বাড়িতে ছোট ভাই আব্দুর রহমানের স্ত্রী কেবল দরজা লাগিয়ে ঘরে থাকছে বলে শুনেছেন তারা।
সাতু’র গ্রামের আব্দুল করিমও জানালেন, সাইদুর রহমানের পরিবারের লোকজন বড়ি তালা দিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তার এজেন্ট যারা ছিল, এরাও বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
সাইদুর রহমানের মেয়ের জামাতা ডেইলি স্টার সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক দ্বোহা চৌধুরী ঘটনার দিন জানান, সাইদুর রহমানের সকল সমর্থকরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তার পক্ষের আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনকেও বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সাইদুর রহমানকে তার বাড়ির সামনেই এসে হামলা করে মারপিট করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনিসহ তার আহত আত্মীয় স্বজনকে প্রথমে চিকিৎসার জন্য নেওয়া যাচ্ছিল না প্রতিপক্ষের লোকজনের জন্য। তারা বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল। পরে পুলিশ প্রহরায় বাড়ি থেকে বের করা হয় তাকে। প্রথমে কলমাকান্দা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাদের। শেষে ময়মনসিংহ হাসপাতালে আনা হয়।
শনিবার সকালে হাসপাতালের পাশের পপুলার ডায়ানস্টিক সেন্টারে সিটি স্ক্যান করার জন্য সাইদুর রহমান ও তার ছেলে ঝিনুককে নেওয়া হয়।
ওই হাসপাতালে পুলিশ এসে তাদের (সাইদুর রহমানের লোকজনদের) খোঁজাখুঁজি করে। এসময় তার নাম (দ্বোহা চৌধুরী) ধরেও পুলিশের লোকজন খুঁজতে থাকে। পরে পপুলার ডায়াগনস্টিক থেকেই হাসপাতালের বিদায় নেবার সকল প্রক্রিয়া সেরে ঢাকায় গিয়েছেন তারা।
তিনি জানান, মধ্যনগর থানা পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে, এজন্য ওখানে তাদের কেউ (সাইদুর রহমানের পক্ষে) মামলা নিয়ে যেতে সাহস করছে না, থানায় গেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে এই ভয়ে। তারা আদালতে শীঘ্রই মামলা দায়ের করবেন।
বিজয়ী চেয়ারম্যান মো. রাজ্জাক ভূঁইয়া জানান, সাইদুর রহমান নির্বাচনের আগে ও পরে কেবল মিথ্যা নাটক সাজাচ্ছেন। আমাদের লোকজনের উপর হামলা হবার পর আমার লোকজন তাকে চর থাপ্পর দিয়েছে। অথচ সে মাথা বেঁধে নিজেকে গুরুতর আহত সাজিয়েছে। পরে সে পুলিশকে জানিয়েছে, আমার লোকজন তাকে চিকিৎসায় যেতে দিচ্ছে না। পুলিশের সাহায্য নিয়ে সে চিকিৎসায় গেছে। এখন সে ও তার পরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তারা বাড়ি ছেড়ে গেলে, আমি কী করবো? ময়মনসিংহ হাসপাতাল ছেড়ে ওরা শনিবার দুপুরেই চলে গেছে।
রাত নয়টায় আমার ভাতিজা আজিম মাহমুদ মামলা করেছে। মামলার আগে দুপুরেই তারা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেল কেন, তাতেই বোঝা যায় তারাই অপরাধি।
সাইদুর রহমান অহরহ সাংবাদিকদেরসহ বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।
ভাই ডিআইজি আব্দুল বাতেন এসব বিষয়ে কোন সহায়তা করছেন না দাবি করে রাজ্জাক ভ‚ইয়া আরও জানান, তবুও নানা অভিযোগে তাঁর (ডিআইজি বাতেনের) নাম যুক্ত করা হচ্ছে। এলাকার পরিবেশও শান্ত রয়েছে।
মধ্যনগরের ঘটনায় শনিবার রাতে একপক্ষের (রাজ্জাক ভূইয়া’র পক্ষ) মামলা নেওয়া হয়েছে দাবি করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাসকে এ ব্যাপারে জিঙ্গের করলে তিনি দেশ রুপান্তকে জানান, দুই পক্ষই মারামারি করেছে। দুই মামলাই গ্রহণ করবে মধ্যনগর পুলিশ। ময়মনসিংহ হাসপাতালে পুলিশ শনিবার যায় নি দাবি করে তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে দাতিয়া পাড়ায় একজন এএসপি, থানার ওসিসহ ৩০ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এখনো দশ জন আছেন। পুলিশ কারো পক্ষপাতিত্ব করছে না।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যায় মধ্যনগরের বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক ভূইয়া ও নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী সাইদুর রহমানের সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনায় ১১ জন আহত হয়। এসময় বাড়িতেও হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন সাইদুর রহমান।