সকাল ১০:২৮,   বুধবার,   ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

তাহিরপুরে ইউপি সদস্য নিজেই ত্রাণ গ্রহীতা, এক তালিকায় ১০ স্বজন

তাহিরপুর প্রতিনিধি :
করোনা পরিস্থিতিতে দিশেহারা দেশের নিম্ন আয়ের ও মধ্যবিত্ত মানুষ। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। কারো ঘরে সুলা জালানোর সাধ্যো নেই। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দেশের কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের খাদ্যসহায়তা করা হচ্ছে। আর এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন কিছু অসাধু মানুষ। অসহায় এসব মানুষের মুখের খাদ্য কেড়ে নিয়ে ভারি করতে চাইছেন নিজের ভাণ্ডার।
কিন্তু সকল আলোচনাকে চাপিয়ে গেলো তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের একজন সদস্যের নতুন কৌশল। তিনি বস্তাভর্তি চাল কিংবা খাদ্যসামগ্রী নিজের ঘরে নিয়ে না গেলেও ত্রাণের তালিকায় যুক্ত করেছেন নিজের নাম। কেবল তাই না, একই তালিকায় ৪৮ টি নামের মধ্যে ইউপি সদস্য নিজের পরিবারেরই ১০ জনের নাম যুক্ত করেছেন। স্থানীয়দের মতে ‘ত্রাণ চুরির নিরাপদ এক কৌশল!’ বাদ পড়েনি শশুর, শাশুড়ি, শ্যালক মেয়ের জামাতার নামও।
এ ইউপি সদস্যের নাম আ. হক। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট (উ.) ইউনিয়নের জাংগাল হাটি, লামা শ্রম, রাজারগাও, ডালার পাড়, লাউড়েরগড় গ্রাম নিয়ে গঠিত ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার।
কিন্তু ইউপি সদস্যের কৌশলে খানিক বাঁধ সাধেন একজন সাংবাদিক। ত্রাণের তালিকা সংগ্রহ করে নিজের ইউপি সদস্যের নামসহ স্বজনদের এমন তালিকা দেখে অবাক স্থানীয় এক সাংবাদিক। তাইতো প্রথমেই সংবাদ প্রকাশ না করে ত্রাণের তালিকায় ইউপি সদস্য ও স্বজনদের নাম বাদ দিয়ে সত্যিকার দিনমজুর ও করোনা পরিস্থিতিতে অসহায়দের মাঝে বিতরণের পরামর্শ দেন। এতেই ক্ষিপ্ত হন আ. হক। প্রকাশ্য জনসম্মুখে সাংবাদিকের পা কেড়ে নেয়ার হুমকি দেন। আর এ ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেয়া এ তালিকা প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে সাংবাদিক আলম সাব্বির এর। এর পর তিনি লাউড়েরগড় বাজারে ইউপি সদস্য আ. হককে পেয়ে সহায়তা তালিকায় নিজের নাম কেন এবং প্রকৃত অসহায়দের নামের বদলে নিজেরই ১০ জন স্বজনের নামের ব্যাপারে জানতে চাইলেই তিনি ক্ষিপ্ত হন। এমনকি প্রকাশ্য জনসম্মুখে পাকেটে নেয়ার হুমকি দেয়ায় স্থানীয় উপস্থিত লোকজন ইউপি সদস্যের এমন অসদাচরণের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন থেকে ইউপি সদস্য আ. হকের স্বাক্ষরিত ৪৮ জনের নামে তৈরি করা এ তালিকা সংগ্রহ করে দেখা যায় এতে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগমের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০টি নাম। আর অবশিষ্ট ৩৮টি নামের মধ্যে তালিকায় ১০জন-ই আ. হকের পরিবারের সদস্য!
তালিকায় উল্লেখিত ক্রমিক নং (৪) জরিনা খাতুন, স্বামী মৃত সাদত আলী (তিনি ইউপি সদস্যের মা) ক্রমিক নং (৩৫) আ। হক, পিতা সাদত আলী (ইউপি সদস্যের নিজের নাম মোবাইল নম্বরসহ অন্তর্ভুক্ত করেছে)।
এছাড়াও শ্বাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালিকা, অপর এক শ্যালকের স্ত্রীর নাম, ইউপি সদস্যের মেয়ের জামাই, ও মামা শ্বশুর। তাছাড়া ছিলনা অনেক নামের সাথে পিতা কিংবা স্বামীর নামের মিল।
এর আগেও ইউপি সদস্য আ. হকের বিরুদ্ধে ভিজিএফসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতেই সাংবাদিক আলম সাব্বির অবহিত করেন এবং বিষয়টি দেখবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে ইউপি সদস্য আ. হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমিও অসচ্ছল লোক, ত্রাণ পাবার অধিকার আমারও আছে। আমি কি ত্রাণ পেতে পারিনা, প্রশ্ন করেন তিনি। এমনকি তালিকায় কে বা কারা আমার নাম দিয়েছে তা জানা নেই বলে জানান।
আপনার স্বাক্ষরসহ সিলমোহর দেয়া আছে তালিকায়? এর জবাবে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
আপনি নাকি সাংবাদিকের পা কেটে নেবার হুমকি দিয়েছেন? উত্তরে বলেন, সাংবাদিককে আমি কোন হুমকি দেইনি। বরং ঐ সাংবাদিক-ই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
এ ঘটনায় তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যনার্জি বলেন, ঘটনার খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।