রাত ২:২৩,   বুধবার,   ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

তাহিরপুরে বহিরাগতদের কারণে করোনা ঝুঁকিতে স্থানীয়রা

আবির হাসান-মানিক :
বৈশ্বিক জনজীবনে মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে প্রতিদিনই নতুন করে লোকজন আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সাথে দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের সংখ্যা।
বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে লোকজনের অসচেতনতার কারণে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার হার বেড়েই যাচ্ছে, বাড়ছে মৃত্যুহারও। সারাদেশে লকডাউন ঘোষিত হয়েছে ঠিক কিন্তু বিশেষত গ্রামীণ পর্যায়ে জনস্রোত টেকানো দুরূহ হচ্ছে।
গত কয়েকদিনে সিলেটের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় বিশেষত নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসা ব্যক্তির মধ্যেই তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হতে দেখা যাচ্ছে। আশংকার মাত্রাটা বাড়ছে এখানেই। কারণ তাহিরপুরে ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুর থেকে প্রবেশ করেছে প্রায় সহস্রাধিকেরও বেশি নারী-পুরুষ ও শিশু।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের হটস্পট (করোনা ঝুকিপূর্ণ অঞ্চল) নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে এ পর্যন্ত বেশ কিছু লোকজন এসেছে যারা নির্দ্বিধায় সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে উপজেলার গ্রামগুলোর বিভিন্ন হাটবাজারে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে! অনেকে আবার ক্ষেত খামারে যাচ্ছে, অবাধে ওঠাবসা করছে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীর সাথে!
ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের হাওর দুর্গম তাহিরপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুরে আক্রান্ত জেলা সদর হাসপাতালের ওই চিকিৎসক থাকেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায়। তিনি সেখান থেকেই মোটরসাইকেলে জেলা সদরে যাতায়াত করেন। বিশ্বম্ভরপুরে তিনি ব্যক্তিগত চেম্বারও করতেন। অপরদিকে জামালগঞ্জ উপজেলায় পরীক্ষায় ২জন করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। আক্রান্ত হওয়া দুজনের বয়স মাত্র ১২ বছর! ওই দুই মেয়েশিশু তাদের শ্রমিক মায়েদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে থাকত।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা গেছে, প্রথমদিকে তাহিরপুরে ২২জনের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় যার ফলাফলে সবগুলোই নেগেটিভ এসেছে পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার আরো ১৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং শনিবার (২৫ এপ্রিল) আরো ৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। যার ফলাফল এখনো হাতে এসে পৌছায়নি।
তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা গেছে, তাহিরপুরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ অন্যান্য জেলা থেকে হাজার খানেকেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু প্রবেশ করেছে। যাদের সবাইকে সনাক্ত করা সম্ভবপর হয়নি। কারণ অনেকেই গোপনে এসে আত্মগোপনে রয়েছে বা গা ঢাকা দিচ্ছে। তবে এদের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ৪৮৪ জনকে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ৮৫ জন ১৪দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থেকে সময়সীমা পার করেছে। বাকি ৩৯৯ জন এখনো হোম কোয়ারান্টাইনেই রয়েছে।
তাহিরপুরে এখনো পর্যন্ত কোন করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি কিন্তু পার্শ্ববর্তী উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জে ইতোমধ্যেই করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে এক্ষেত্রে তাহিরপুর উপজেলাকে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকিমুক্ত বলে মনে করছেন; এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএফপিও) ডা. মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে তাতে ফলাফল নেগেটিভ এসেছে, আরো কয়েকটির ফলাফল এখনো হাতে এসে পৌছায়নি।
পর্যাপ্ত কীট না থাকার কারণে সীমিত পরিসরে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাতে হচ্ছে। তাহিরপুরে এখনো কোন রোগী সনাক্ত হয়নি তাতে হাঁফছেড়ে বাঁচার কোন কারণ দেখছি না কারণ তাহিরপুরে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে হাজার খানেকেরও বেশি লোকজন এসেছে যাদের সবাইকে নানান কারণে এখনো পর্যন্ত সনাক্ত করা সম্ভবপর হয়নি। তাই আমি বলছিনা যে, তাহিরপুর উপজেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিমুক্ত আছে বরং সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো অবনতি হবার আশংকাটাই রয়ে যাচ্ছে অধিকমাত্রায়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে, যা তাহিরপুরের জন্য সংকেতবার্তা বলে মনে করছি। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, দেশের হটস্পট (করোনা ভাইরাস ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা) থেকে তাহিরপুরে প্রায় সহস্রাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু প্রবেশ করেছে বলে আমরা জেনেছি, এদের মধ্যে অনেককে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত কীট না থাকার কারণে সন্দেভাজনদের টেস্টের আওতায় একসাথে না এনে ক্রমান্বয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন- ‘এছাড়া প্রশাসনিক নজরদারি ও স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বাহিরের জেলা থেকে আগতদের মধ্যে অনেকগুলো পরিবারকে আমরা লকডাউনে রেখেছি। এবং এ সমস্ত লকডাউনে রাখা পরিবার সমূহের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে।’
অনেকে আবার বাহিরের জেলা থেকে তাহিরপুরে এসে আত্মগোপনে বা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে, যাদেরকে খুঁজে বের করতে প্রশাসনিক তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
বিজেন ব্যানার্জি বলেন- তাহিরপুর উপজেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিমুক্ত কোনভাবেই বলা যাচ্ছে না বরং সংক্রমিত হবার আশংকাই রয়ে যাচ্ছে অধিকমাত্রায়। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ গ্রামীণ পর্যায়ে জনসমাগম ঠেকাতে আগের তুলনায় আরো কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে অচিরেই।