রাত ৮:২৮,   শনিবার,   ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ৯ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বসন্তের ছোঁয়া জয়নাল আবেদীনের শিমুল বাগানে

মোসাইদ রাহাত :
নতুন বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী ঋতুরাজ বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস আজ শুক্রবার। একই সাথে ঋতুরাজ বসন্ত শুরু হওয়া ভালোবাসা দিবসের তারিখ একদিনে হয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জে পর্যটকদের আনাগোনা ছিলোও চোখের পড়ার মতো। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় যাদুকাটা নদী, টেকেরঘাট ছাড়াও পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ছিলো তাহিরপুর উপজেলা বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও গাছপ্রেমিক জয়নাল আবেদীনের তৈরি করে যাওয়া শিমুল বাগান। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনায় ব্যস্ত ছিলো এই পর্যটন স্থানটি।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা এক শিমুল গাছের বাগান। ২০০৩ সালে ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে তিন হাজার শিমুল গাছ লাগান জয়নাল আবেদীন। বসন্তকালে শিমুল বাগানের দিকে তাকালে গাছের ডালে ডালে লেগে থাকা লাল আগুনের ঝলকানি চোখে এসে লাগে। শিমুল ফুলের রক্ত লাল পাপড়িগুলো এই সৌন্দর্য এখানে আসা সমস্ত মানুষের মনকেই রাঙিয়ে দেয়। এক দিকে মেঘালয়ের পাহাড় সারির অকৃত্রিম সৌন্দর্য অন্য দিকে রূপবতী যাদুকাটা নদীর তীরের শিমুল বাগানের তিন হাজার গাছে লাল ফুলের সমাহার শরীরে ভাল লাগার শিহরণ ধরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।
সরজমিনে, শুক্রবার সকালে শিমুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন হাজারো মানুষ। ভালোবাসা দিবস ও ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে কেউ পুরো পরিবার নিয়ে, কেউবা স্বামী ও স্ত্রী এবং এসেছেন প্রেমিক-প্রেমিকা। সবমিলিয়ে শিমুল ফুলের রক্তিম আভার সৌন্দর্য উপভোগ করতেই এখানে এসেছেন তারা। বর্তমানে আগের ছেয়ে বাগানের রক্ষণাবেক্ষণেও গুরুত্ব দিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। পর্যটকদের বসার জায়গা থেকে শুরু করে খাবারের জন্য রাখা হয়েছে ক্যান্টিন। তাছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাখা হয়েছে নিরাপত্তা প্রহরী। শিমুল ফুলের সাথে নিজেকে কিছু সময় ব্যয় করা এবং সেই ফুলের সাথে ছবি তুলার জন্যও রয়েছে ফটোগ্রাফার এবং ছোট ছোট শিশুদের তৈরি করা ভালোবাসার প্রতীকগুলোও অন্যরকম নজর কাড়ে পর্যটকদের।
ঢাকা থেকে আসা ফখরুল আলম বলেন, ফেইসবুকে শিমুল বাগান দেখে এখানে আসা। ফেইসবুকে যেরকম দেখেছি বাস্তবে তার থেকেও কিন্তু বেশি সুন্দর এই শিমুল বাগান। এখানে আসলে অবশ্যই মন ভালো হয়ে যাবে যে কারোরই। আমার প্রথমবার এখানে আসার পরবর্তীতে আবারো আসবো এই শিমুল বাগানে।
মানজিম আহমেদ বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী এই প্রথমবার সুনামগঞ্জে আসলাম। সুনামগঞ্জে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিলো এই শিমুল বাগান। এখনো ফুলগুলো ভালোভাবে না ফুটলেও সত্যিই জায়গাটা অনেক সুন্দর। যে মানুষটি এই কাজ করে গিয়েছেন তার প্রশংসা করতেই হয়।
বাগানের মালিক জয়নাল আবেদীন মেয়ে জেলা পরিষদ সদস্য সেলিনা আবেদীন বলেন, আমার বাবা প্রকৃতি প্রেমী ছিলেন। এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই শিমুল বাগানটি তিনি নিজে গড়ে গেলেও তার সৌন্দর্য তিনি উপভোগ করতে পারেননি। আমরা এখানে পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা, খাওয়ার জায়গা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করেছি। পর্যটকরা যেন এখানে এসে হাসি খুশি থাকতে পারেন এবং শহরের জীবনের ব্যস্ততা থেকে নিজেকে কয়েক মুহূর্তের জন্য দূরে রাখতে পারেন সেজন্য আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।