বিকাল ৫:৪৩,   মঙ্গলবার,   ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

হাওরপাড়ের কৃষকের ধানের টাকা যাচ্ছে মহাজনের ঘরে!

আবির হাসান-মানিক :
হাওর অঞ্চল সুনামগঞ্জ তথা তাহিরপুরের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেকাংশেই নির্ভর করে বোরো ফসলের উপর। যদিও বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে সর্বত্রই আতংক বিরাজমান, এ অবস্থার মাঝেই গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবার সুবাধে কৃষকের মুখে যেন রাজ্য জয়ের হাসি।
তাহিরপুরে ছোটবড় প্রায় ২৩টি হাওরেই এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবার কারণে স্বস্তির নিশ্বাস এ অঞ্চলের সব কৃষকসহ সব শ্রেণির মানুষের মাঝে। করোনা পরিস্থিতিতে যদিও প্রথমদিকে ধারণা করা হয়েছিল যে শ্রমিক সংকট দেখা দিবে কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ততটা প্রভাব পড়েনি তাতে। তাছাড়া সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক এ বছর ধান কাটায় ছাত্র, শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজনের অংশগ্রহণছিল স্বতস্ফুর্ত।
ইতোমধ্যেই হাওরের প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে, এখন পুরোদমে চলছে ধান মাড়াই এবং খলাগুলোতে ধান শুকানোর কাজ। কৃষক ও তাহিরপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আর সপ্তাহ ১০ দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হাওরের প্রায় সব ধান কাটা শেষ করা যাবে।
এদিকে ফলন আশানুরূপ হলেও কৃষকের সোনার ফসল নিজেদের গোলায় উঠানোর সুযোগ কম পাচ্ছে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকেরা। শুরুতেই মহাজনের নিকট থেকে টাকা ধার নিয়ে ফসল ফলানোর কারণে কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনির ফসল কম দামে নিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
টাকা পরিশোধ করতে কোন কোন কৃষক আবার ধান মাড়াইয়ের পূর্বেই কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে করে কৃষকের গোলা ধান শূন্য হবার আশংকা থেকে যাচ্ছে।
এদিকে গত ২৮ এপ্রিল সরকারিভাবে ধান চাল ক্রয় উদ্বোধন করা হয়েছে। তাহিরপুর খাদ্য গুদামে প্রতি কৃষক ধান দিতে পারবে ১ মেট্রিক টন করে। প্রতি মন ধানের সরকারি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা।
আর এ ধান ক্রয় করা হবে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের কাছ থেকে। বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিস প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের একটি তালিকা করছে। আগামী ১০ মে’র মধ্যে তালিকার কাজ শেষ হবে। তালিকাকৃত কৃষকদের থেকে লটাারীর মাধ্যমে নির্বাচিতদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে।
বর্তমানে স্থানীয় হাটে ধানের বাজার দর ৭’শ থেকে ৭’শ ৫০ টাকা। আর যারা ধান কাটার আগে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তারা ধান বিক্রি করেছেন ৫’শ টাকায়। ফলে কৃষকের বিপরীতে লাভের মুখ দেখবে উপরোক্ত মহাজনরা।
‘হাতে নগদ টাকা না থাকায় ধান কাটা মাড়াইর পূর্বেই ২০ মন ধান ৫শ টাকা ধরে বিক্রি করে দিয়েছি ব্যবসায়ীর কাছে’, অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বললেন উপজেলার শনির হাওরপাড়ের উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক জাক্কার মিয়া।
প্রতি বছরই ২-৩শ মন ধান পায় কিন্তু কখনোই খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারিনি। লটারীতে যাদের নাম উঠে ততক্ষণে তাদের অধিকাংশের ঘরেই খাদ্য গুদামে ধান দেয়ার মত ধান থাকে না, খাদ্য গুদামে তখন ধান দেয় এক শ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এমনই অভিব্যক্তি মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আল-আমিনের।
উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী ১২ মে থেকে কৃষকরা সরাসরি খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারবেন, তাছাড়া ইচ্ছে করলেই আমরা এখন-ই ধান নিতে পারি না। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে ধান সংগ্রহ করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান-উদ-দৌলা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে তাহিরপুর উপজেলায় ১৭ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর এবং ধারনা করা হচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হওয়ায় সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবেন।
এদিকে কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান। প্রকৃত কৃষকরা যেন খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারে সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।