সকাল ১০:৪১,   মঙ্গলবার,   ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ৪ঠা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

করোনা শনাক্ত হওয়ার পরও ভয় নেই তাহিরপুরের মানুষের

\আবির হাসান-মানিক :
স্বরূপে ফিরছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জনজীবন! সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে দোকানপাট খোলার নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার হাটবাজারের দোকানপাটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি আর আমলে নিচ্ছে না অনেকেই। যানবাহন চলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজমান।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জ জেলায় ৫৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত (৪ মে) পর্যন্ত একমাত্র উপজেলা ছিল তাহিরপুর যেখানে কোন করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি! পরের দিন (৫ মে) তাহিরপুরে প্রথমবারের মতো ৬ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে সুনামগঞ্জের ১১ টি উপজেলার মধ্যে সবকটিতেই করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে।
এদিকে প্রথমবারের মতো তাহিরপুরে যে ৩ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, সন্দেহভাজন হিসেবে গত ২২ এপ্রিল তাদের নমুনা পরীক্ষা পাঠানো হয়। আক্রান্তদের ফলাফল দেরিতে আসায় এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে আলোচনা সমালোচনা। তাছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জনই রিপোর্ট আসার চার দিন আগেই আবারো ঢাকা ফেরত গেছে। তাহিরপুরে ঢাকা ফেরত এই ছয়জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বলা হলেও তারা তা মানেনি। বরং বাড়িতে থাকা আক্রান্তদের একমাত্র সদস্য (৫ মে) সকাল থেকে ধানকাটায় ছিল। দুপুরে করোনা পজেটিভ রেজাল্ট আসলে তাকে নিজ ঘরে এনে রাখা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, গত (৫ মে) পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে সিলেট ও ঢাকার ল্যাবে পাঠানো হয় এবং এর মধ্যে থেকে ৬ জনের ফলাফল পজিটিভ আসে।
সম্প্রতি রোজার ঈদকে সামনে রেখে ১০ মে থেকে দেশের দোকানপাট ও শপিং মল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার।বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশের শপিং মলগুলোর পাশাপাশি সব ধরনের দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে সারাদেশে করোনা ভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।
গত সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় ধরে তাহিরপুরের বিভিন্ন হাটবাজারে আগের মতো সেনাবাহিনী বা পুলিশ সদস্যদের টহল আর চোখে পড়েছে না। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি অনেকাংশেই এখন উপেক্ষিত, তাছাড়া জনসাধারণের মাঝেও করোনা ভীতি নেই আগের মতো। অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনযাত্রা। লকডাউন বলতে যেন আর কিছুই দৃশ্যমান নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাটের পাশাপাশি অন্যান্য সব দোকানপাট নিয়মিত খোলা হচ্ছে। চলছে রাত অবধি।
দোকানগুলোতে কেনাকাটায় জটলার দৃশ্য এখন নিয়মিত। যানবাহনগুলোর চলাচলও স্বাভাবিক হওয়ায়, দূরদূরান্তের লোকজন অনেকটা নির্ভার হয়েই চলাচল করছে। জনসাধারণের চলাচলে ভাবখানা এমনই যে, “করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় আমরা সফল হয়েছি।
নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো গেলে তাহিরপুরে করোনা রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে, এমনই ধারণা স্থানীয় সচেতন মহলের। তাদের মতে, এ রোগে সনাক্ত হওয়ার মতো যথেষ্ট উপকরণ তাহিরপুর উপজেলায় রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উপকরণ হলো, দেশের অন্যতম করোনা হটস্পট নারায়ণগঞ্জসহ গাজীপুর ও ঢাকা থেকে এ উপজেলায় প্রায় সহস্রাধিক নারী পুরুষ প্রবেশ করেছে যা কেবল আতংকের বার্তায়ই বহন করছে। যদিও বহিরাগতদের মধ্য থেকে অনেকগুলো পরিবারকে লকডাউনের আওতায় নেয়া হয়েছে এবং হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
অপরদিকে বহিরাগতদের ব্যাপারে শুরু থেকেই স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল যে, অনেক ক্ষেত্রেই হোম কোয়ারেন্টাইন মানছে না আগত কিছু কিছু লোকজন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, জনসমাগম এড়িয়ে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে দোকানপাটগুলোতে কেনাবেচা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া তাহিরপুরে ইতোমধ্যে যেসমস্ত বহিরাগত প্রবেশ করেছে ও যারা বাহির থেকে নতুন করে প্রবেশ করছে তাদের সকলের উপরই কড়া নজরদারি রয়েছে এবং তাদের শনাক্ত করে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাসহ সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।