ভোর ৫:৩৯,   সোমবার,   ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,   ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বদলে গেছে সুনামগঞ্জের চোরের গ্রাম

বিশেষ প্রতিনিধি:
’গ্রামের নামটা বললেই মানুষ হাসে। এমন নাম বলতে ভালো লাগে না, বরং লজ্জা লাগে। বলে বাপ-দাদা কি চোর ছিল? না হলে কেন এমন নাম ? এমনকি কোন জায়গায় ঘুরতে গেলেও মানুষ গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করলে লজ্জায় বলতে পারি না। বলছিলাম সুনামগঞ্জ শাল্লা উপজেলার চোরের গ্রামের কথা।
তবে এক সময় এই সব গ্রামের মানুষদের পেশা চোরি-ডাকাতি থাকলেও এখন ভাগ্য বদলের জন্য ওই গ্রামের নারী পুরুষরা দিনরাত মাঠে ঘাটে পরিশ্রম করছেন।


খোজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ের আলোচিত চোরের গ্রাম হিসাবে পরিচিত জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন শাল্লা উপজেলার খামারগাঁও, নারকিলা, উজানগাঁও, বল্লভপুর ও দিরাই উপজেলার জাহানপুর গ্রাম। দুর্নামে আলোচনায় থাকলেও কাজের বেলায় রয়েছে বিস্তর ফারাক। এক সময়ের চোরের গ্রাম এখন অনেকটাই পরির্বতন হয়েছে। এলাকাবাসী ছেড়ে দিয়েছেন অসম্মানজনক চুরি-ডাকাতির এই পেশা।
নারকিলা গ্রামের বাসিন্দা আমেনা বেগম। এক সময় স্বামী চুরি -ডাকাতি করতে পারলে চুলায় আগুন জ্বলত। কিন্তু তার স্বামী এখন চুরি ছেড়ে কৃষি কাজে লিপ্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয় সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে আমেনা বেগমও গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার।


তিনি জানান, আমরা খারাপ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন ভালো হয়ে গেছি। যে কোন সহযোগীতার জন্য কারো কাছে গেলে তারা আমাদের সহযোগীতা করে না।
সুনামগঞ্জ শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে দূর্গম এলাকা-শাল্লায় পাঁচটি গ্রাম রয়েছে। অভাব অনটনে এইসব গ্রামের মানুষ এক সময় জড়িত ছিল চুরি-ডাকাতিতে। সে জন্য দিন দিন গ্রাম গুলো পরিচিত পায় চোর-ডাকাতের গ্রাম নামে।
১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে ভোটার তালিকায় পেশা চোর উল্লেখ করেই জাতীয়ভাবে আলোচনা-সমালোচনায় উঠে আসে শাল্লা উপজেলার এইসব গ্রাম। পেশা চুরি হওয়ায় এই গ্রামের সবাইকে পাশ্ববর্তি গ্রামের লোকজন ঘৃণা করে।

কিন্তু দিন বদলে গেছে। এই সব গ্রামের মানুষ এখন চুরি-ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে কেউ কৃষি কাজ করছেন, কেউ মাটি কাটছেন আবার কেউ বা মাছ বিক্রি করছেন। সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পুরুষদের পাশা পাশি নারীরাও গড়ে তুলেছেন হাঁস মুরগির খামার।


তবে এই সব গ্রামের মানুষ চুর- ডাকাতির পেশা ছেড়ে দিয়ে সবার মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাইলেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে আসছে না কেউ। যার ফলে অভাব, অনটন নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
গ্রামের মানুষ জানান, আমরা চুরি- ডাকাতির পেশা বদল করে স্বাভাবিক ভাবে বাচঁতে চাই। সেই চেষ্টা করছি কিন্তু কেউতো আর আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। সবাই আমাদের ঘৃণা করে। এমনকি চুরি ছেড়ে দেবার পরও অন্য গ্রামে চুরি হলে আসামী করা হয় এই সব গ্রামের পুরুষদের। করা হয় মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন। এই সব গ্রামের মানুষের প্রত্যাশা সরকারের বাড়তি নজর দারি ও সুযোগ সুবিধা পেলে এই গ্রামের শিশুরাও আগামীতে দেশের কল্যাণে কাজ করে এই গ্রাম গুলো থেকে অতিথিতের ঘটে যাওয়া কলঙ্ক মুছে দিতে পারবে।
নারকিলা গ্রামের আলী হায়দার বলেন, অনেক আগে চুরি ছেড়ে দিয়ে সৎভাবে বাঁচার চেষ্টা করছি।
উজানগাঁও গ্রামের হারুন মিয়া বলেন, এক সময় না বুজে চুরি ডাকাতি করতাম কিন্তু বর্তমানে এইসব পেশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমরা পরিশ্রম করো বাঁচার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি এই গ্রাম গুলোর প্রতি সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, চোরের গ্রামের মানুষ যাতে পেশা বদল করে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য তাদের সরকারীভাবে সহযোগীতা করা হচ্ছে।